মহেন্দ্রনাথের কর্মজীবনের কথা বলছেন নাতবউ মনিকা। নিজস্ব চিত্র।
তখন ইংরেজ রাজত্ব। স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। স্বদেশী দ্রব্য বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতে যেতেন তিনি। জেলও খেটেছেন। সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী মহেন্দ্রনাথ করনের মৃত্যুর পর কেটেছে বহু বছর। এতদিন পর মহেন্দ্রনাথের পরিবারের ভাগ্যে জুটেছে 'বাংলা আবাস যোজনা'র সুবিধা। তৈরি হবে নতুন বাড়ি। কিন্তু তাদের মাটির বাড়িটি মহেন্দ্রনাথের পরিবারের কাছে মন্দির স্বরূপ। এটি সংরক্ষিত হওয়া উচিৎ বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা।
‘বন্দে মাতরম’ ভিক্ষু সম্প্রদায় গঠন করে বাড়ি বাড়ি স্বদেশী দ্রব্য বিক্রি করতেন মহেন্দ্রনাথ। পাশাপাশি তিনি ছিলেন ইতিহাসকার, সাংবাদিক এবং চিত্রগ্রাহক। ১৮৮৬ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। খেজুরির ভাঙনমারি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মারা যান মাত্র ৪১ বছর বয়সে। ভাঙনমারি গ্রামের বিদ্যালয়ের পাশে তাঁর মাটির বাড়ি। পাশে মস্ত বড় পুকুর, রাস্তাঘাট। ১৭৫ বছরের পুরনো বাড়িতে চওড়া মাটির দেওয়াল, চৌ ঘর— সব কিছুই আগের মতই রয়েছে।
পিছিয়ে পড়া পৌণ্ড্র জাতির উন্নতিকল্পে মহেন্দ্রনাথের কাজ স্মরণীয়। যদুনাথ সরকার তাঁর ‘মহেন্দ্র পরিচয়’ প্রবন্ধে লিখছেন, ‘বর্ণাশ্রম হিন্দুধর্ম সমাজের অনুন্নত অসহায় বর্ণগুলিকে পিষিয়া, ঘৃণা করিয়া ফেলিয়া রাখিয়াছিল, মহেন্দ্র ও তাঁহার সহ কর্মীগণ আজীবন যুদ্ধ করিলেন এই পীড়িত আত্মবিস্মৃত জাতিটিকে আবার মাথা তুলিয়া খাড়া হইবার জন্য’। তিনি গড়েছিলেন স্কুল, চিকিৎসালয়, পাঠাগার।
মহেন্দ্রনাথের পরিবার চলতি বছর 'বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে' বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন। ইট-ও কেনা হয়েছে। তবে নতুন বাড়ি তৈরি এখনও শুরু হয়নি। মহেন্দ্রনাথের নাতবৌ মনিকা করন বলেন,"নতুন যাই হোক না কেন, পুরনো বাড়ি আমাদের কাছে মন্দির। এটা সংরক্ষণ করে রাখাই আমাদের কর্তব্য। এর সঙ্গে মহেন্দ্রনাথের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।"