—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সরকার যেন সহায় হয়— সদ্যোজাত সন্তানকে আগলে বললেন সদ্য পত্নীহারা স্বামী। বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে আসা কান্না চেপে চারদিনের শিশু কোলে বাবা দেবাশিস রুইদাসের কাতর আর্জি, মামনির মৃত্যুতে জড়িতরা যেন ছাড়া না পান।
রবিবারের সকাল। সারগা গ্রামের দাসপাড়ায় অশ্বত্থ গাছের তলায় জড়ো হওয়া গ্রামবাসীদের চর্চায় মেদিনীপুর মেডিক্যালের সেই ঘটনা। গড়বেতা ৩ ব্লকের (চন্দ্রকোনা রোড) শঙ্করকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রামের প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। শুক্রবারের সেই ঘটনায় হতবাক গ্রামের বাসিন্দারা। তার আগে বুধবার অস্ত্রোপচার করে মামনির পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সে দিন তাঁর পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, নিম্নমানের স্যালাইন আর ওষুধেই মামনির মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকালে সদ্যোজাত সন্তান কোলে মামনির স্বামী দেবাশিস রুইদাসের কথাতেও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার জন্য মামনি আর ফিরল না। তাঁর মৃত্যুতে যাঁরা জড়িত তাঁরা যেন ছাড়া না পায়, তাঁদের যেন শাস্তি হয়।’’ দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন তাঁর পরিজন, প্রতিবেশীরাও।
শুক্রবার রাতে ময়নাতদন্তের পর স্ত্রীর দেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন স্বামী দেবাশিস। করেছেন শেষকৃত্য। সেই রাতেই তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানকেও বাড়িতে এনেছেন তাঁরা। দুধের শিশুকে আগলে রেখেছেন বাবা, ঠাকুমা কল্পনা রুইদাস। পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা। শিশুখাদ্য, মশারি, দুধের ব্যবস্থা, জল, বিছানা-সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। এখনও সদ্যোজাতের জন্মের শংসাপত্র হাতে পাননি দেবাশিস। তবে সকলে মিলে চারদিনের পুত্র সন্তানের নাম রেখেছেন অনুপ। ‘‘নামটা আগের থেকেই ভেবে রেখেছিলাম’’— বললেন দিনমজুর বাবা। দেবাশিস বলতে থাকেন, ‘‘প্রথমবার মেয়ে হয়েছিল। তখনও সিজার করে। এ বার প্রথম থেকেই মামনি বলছিল ছেলে হবে। এমনকি হাসপাতালে যাওয়ার আগেও বলে গেল আমাদের ছেলেই হবে, ছেলে নিয়েই ফিরব। নাম ঠিক করে রাখো। কিন্তু যে বলল, সে-ই আর ফিরল না।’’ ডুকরে কেঁদে ওঠা বাবার পাশে এসে বসে তাঁদের বছর চারেকের কন্যাসন্তান অনু।
এই খেটে-খাওয়া পরিবারের এখন একটাই চিন্তা মা-হারা সদ্যোজাত শিশুকে কী ভাবে বড় করে তোলা হবে। জন্মেই মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত শিশু, তারপর নিত্য অভাবের সংসার। এক ছটাক চাষযোগ্য জমিও নেই। দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়েই সংসার চালান দেবাশিস। মাটির এক কুঠরিতে কোনও রকমে তাঁদের দিনযাপন। আবাস তালিকায় নাম রয়েছে, তবে এই ঘটনায় এখন বাড়ি করার ইচ্ছে উবে গিয়েছে তাঁদের। পুত্রবধূকে হারিয়ে শোকে পাথর শ্বাশুড়ি কল্পনা রুইদাস বলেন, ‘‘মা হারা এই দুধের শিশুকে সরকার না দেখলে কী ভাবে মানুষ করব!’’