নজরে পাঁশকুড়া ও হলদিয়া

অসম টক্করেও জমজমাট ভোট ময়দান

এক সময় শিল্পাঞ্চল হলদিয়ার শ্রমিক সংগঠনের আর কৃষিপ্রধান পাঁশকুড়ায় দুই সিপিএম ও সিপিআইয়ের দাপটে বিরোধিতার জায়গা ছিল দুর্বল। ১৯৯৭ সালে হলদিয়া আর ২০০২ সালে পাঁশকু়ড়া পুরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে দুই পুরসভাই বামেদের দখলে ছিল।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল ও আরিফ ইকবাল খান

তমলুক ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

তদারকি: হলদিয়ার মহকুমাশাসক। নিজস্ব চিত্র

দুর্গরক্ষায় মরিয়া শাসক, আর অস্তিত্বের লড়াই বিরোধীদের। আজ, রবিবার পাঁশকুড়া, হলদিয়ার পুরসভা দখল ঘিরে টক্কর সমানে সমানে না-হলেও উত্তেজনা টানটান।

Advertisement

শনিবার বিকেলেই জেলাশাসক রশ্মি কমল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা প্রস্তুত। সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুথে বুথে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। মোতায়েন হয়েছে পুলিশ। আবার ওই বিকেলেই অন্য ‘প্রস্তুতি’র অভিযোগে শাসকের দিকে আঙুল তুলেছে বামফ্রন্ট। এ দিন সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘কেশপুর, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, কাঁথি এলাকা থেকে গাড়ি বোঝাই করে প্রায় এক হাজার বহিরাগত হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় ঢুকেছে। হলদিয়ার বিভিন্ন হোটেল, অতিথিশালায় তাদেররেখেছে তৃণমূল।’’

কাজ: পাঁশকুড়া ডিস্ট্রিবিউশন কেন্দ্রে পুলিশ কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

Advertisement

ভোট লুঠের উদ্দেশ্যেই তৃণমূল এলাকায় লোক ঢোকাচ্ছে হলে অভিযোগ নিরঞ্জনবাবুর। সঙ্গে চলছে হুমকি— বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টরা যাতে বুথ মুখো না-হন। নিরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব। আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি।’’ ভোটের দিন হলদিয়া– নন্দীগ্রাম ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। নিরঞ্জনবাবুর নেতৃত্বে বাম প্রতিনিধিদল জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কাছে স্মারকলিপিও দেন। যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেছেন, ‘‘বাইরে থেকে লোক আনার প্রয়োজন পড়ে না তৃণমূলের। ভোটে কোনও রকম গোলমাল হবে না।’’

পূর্বে পুর-যুদ্ধ

পুরসভা: পাঁশকুড়া


ওয়ার্ড: ১৮


ভোট কেন্দ্র: ৪৬


গতবারের ফল: তৃণমূল ১২ , বাম ৫ ( সিপিএম ৩, সিপিআই ২ ) গতবার ওয়ার্ড ছিল ১৭


দলবদলের পরে বিন্যাস: তৃণমূল- ১৬ , সিপিএম- ১


এ বার প্রার্থী: ৫৬ (তৃণমূল ১৮, বিজেপি ১৫, কংগ্রেস ৪, সিপিএম ৪, সিপিআই ৩, এসইউসি ৫, নির্দল ৭)

নিরাপত্তায়


মোট পুলিশকর্মী ৩৫০


ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ১৫০


প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ আধিকারিক, ৪ জন সশস্ত্র কনস্টেবল, একজন লাঠিধারী পুলিশ


দু’টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। শহরে ঢোকার মুখে চার জায়গায় চেক পোস্ট

এক সময় শিল্পাঞ্চল হলদিয়ার শ্রমিক সংগঠনের আর কৃষিপ্রধান পাঁশকুড়ায় দুই সিপিএম ও সিপিআইয়ের দাপটে বিরোধিতার জায়গা ছিল দুর্বল। ১৯৯৭ সালে হলদিয়া আর ২০০২ সালে পাঁশকু়ড়া পুরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে দুই পুরসভাই বামেদের দখলে ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের আন্দোলন রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সে বছরই পাঁশকুড়া পুরসভা দখল করে তৃণমূল। বামেরা হলদিয়া ধরে রাখতে পারলেও কমে যায় আসন সংখ্যা। ২০১২ সালে হলদিয়া পুরসভায় ফের জিতে পুরপ্রধান হন সিপিএমের তমালিকা পণ্ডাশেঠ। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যেই একাংশের বাম কাউন্সিলর দলবদলে তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে ক্ষমতা চলে যায় তৃণমূলের হাতে। পাঁশকুড়াতেও তখন তৃণমূল। ২০১৬ সাল হলদিয়া বিধানসভায় অবশ্য জয়ী হন পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের তাপসী মণ্ডল।

পূর্বে পুর-যুদ্ধ

পুরসভা: হলদিয়া


ওয়ার্ড: ২৯


ভোট কেন্দ্র: ৮৭


গতবারের ফল:

বাম ১৫ (সিপিএম ১৩ , সিপিআই ২), তৃণমূল ১১। গতবার ওয়ার্ড ছিল ২৬


দলবদলের পরে বিন্যাস:
তৃণমূল ২২, সিপিএম ০৪


এ বার প্রার্থী: ১০০
(তৃণমূল ২৯, সিপিএম ২৫, সিপিআই ৪, বিজেপি ২৬, কংগ্রেস ১২, নির্দল ৪)

নিরাপত্তায়


থাকছে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনী, একাধিক টহলদারি ভ্যান


প্রতি বুথে একজন পুলিশ আধিকারিক , ৪জন সশস্ত্র পুলিশ, একজন লাঠিধারী পুলিশ

এরই মধ্যে অবশ্য নতুন করে বিজেপির আবির্ভাব হয়েছে। হলদিয়ার একদা প্রভাবশালী সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ যোগ দিয়েছেন সে দলে। ফলে এ বারের নির্বাচনে বিজেপি একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ভোটের আগে লক্ষ্মণ শেঠকে তেমন সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। বিজেপির রাজ্যনেতা বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি জানান, ‘‘লক্ষণবাবুর কিছু সমস্যা রয়েছে তবে লক্ষণ ঘনিষ্ঠ প্রণব দাসেরা প্রচারে বেরিয়েছেন।’’ হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল-বিজেপি লড়াইয়ের পাশে বামেদের প্রভাবও অক্ষুন্ন।

পাঁশকুড়া পুরসভায় টানা ১০ বছর ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। এ বার তাই পুরসভা বিরোধী-শূন্য করার ডাক দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ১৮ ওয়ার্ডের এই পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে তৃণমূল।

তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মনে করছেন লড়াই পাঁশকু়ড়াতেও তেমন সহজ নয় শাসকদলের পক্ষে। কারণ, কোন্দলের কাঁটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement