—প্রতীকী চিত্র।
দুর্গাপুজোর পাঁচদিনে অরণ্যসুন্দরী জেলা ঝাড়গ্রামে বিক্রি হল রেকর্ড পরিমাণ মদ। টাকার অঙ্কে হিসেবটা চার কোটি ২৫ লক্ষ টাকার। জেলা আবগারি দফতর সূত্রে খবর, বিগত দিনে পুজোর ক’দিনে এত টাকার মদ বিক্রি আগে কখনও হয়নি। এ ছাড়াও পুজোর মাসে জেলায় ১৭ কোটি টাকার মদ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জেলা আবগরি দফতরের এক কর্তার আশা, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’’ তিনি আরও জুড়ছেন, ‘‘মদ বিক্রির এখন সরকারের প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা রাজস্ব আয় হয়।’’
আবগারি দফতর সূত্রে খবর, এ বার ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ৩৩ হাজার ২০০ লিটার বিয়ার বিক্রি হয়েছে জেলায়। অর্থাৎ প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকার বিয়ার বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও হুইস্কি, রাম, জিন্, ভদকা-সহ অন্য বিদেশি মদ ৪২ হাজার ৯০০ লিটার বিক্রি হয়েছে। দেশি মদ বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ১০০ লিটার। তবে দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে তুলনামূলক ভাবে মদ বেশি বিক্রি হয়, সেটাই স্বাভাবিক।’’ কিন্তু গত বছর পুজোর মরসুমে যে পরিমাণ পর্যটক ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন। তার তুলনায় এ বার পুজোয় পর্যটক ছিল কম। অনেক পর্যটক বেড়াতে এসে মদ্যপান করেন। যার ফলে বিক্রি বাটা আরও বেশি হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী ওড়িশা ও ঝাড়গ্রাম রাজ্য থাকায় এই জেলায় বিক্রির হার তুলনামূলক বেশি।
২০২২ সালে দুর্গাপুজোর ক’দিনে জেলায় তিন কোটি টাকা এবং পুজোর পুরো মরসুমে প্রায় ১১ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছিল। গত বছর পুজোর ক’দিনে চার কোটি ২০ লক্ষ টাকা এবং পুজোর মাসে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছিল। এ বার পুজোর পাঁচদিনে মদ বিক্রির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে চার কোটি ২৫ লক্ষ টাকা এবং চলতি অক্টোবরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে বলে খবর। জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান রয়েছে ৩৯টি। তার মধ্যে বিয়ার বিক্রি করার লাইসেন্স রয়েছে ৩৪টি দোকানের। ৩৯টি দোকানের মধ্যে ২৭টি অফশপ। অনশপ (বার, হোটেল) ১২টি। ১২টি অনশপের মধ্যে চারটি ঝাড়গ্রাম শহরে রয়েছে। জামবনি ব্লকের চিচিড়ায় একটি, গোপীবল্লভপুরে একটি, শিলদায় একটি, লালগড়ের সিঁজুয়া-সহ বিভিন্ন ব্লকে রয়েছে।
মদ বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরকারের রাজস্বের পরিমাণও বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবগারি দফতরের দাবি, চোরাই পথে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মদ বিক্রির পরিমাণও অনেকটাই কমেছে। অন্য দিকে, চোলাই রুখতেও কড়া পদক্ষেপ করছে জেলা আবগারি দফতর। এতে লাভবান হয়েছেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদ বিক্রেতারা। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রাজস্বের পরিমাণও। আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘বেআইনি মদ বিক্রি বন্ধ করতে লাগাতার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। চোলাইয়ের বিরুদ্ধেও নানা ভাবে সচেতন করা হচ্ছে।’’ জানা গিয়েছে, গত বছর এপ্রিল থেকে পুজোর আগে পর্যন্ত মদ বিক্রি করে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৯ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। এ বছর সেই সংখ্যাটা ১০৫ কোটি পার করে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে জেলা আবগারি দফতরের। জেলা আবগারি সুপার তনয় গুহ বলেন, ‘‘এ বার আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মদ মজুত ছিল। যার ফলে উৎসবের মরসুমে বিক্রিও বেশি করা গিয়েছে।’’