শরীরী বাধা জয় করে মনের জোরে মাধ্যমিকে

সবংয়ের মশাগ্রাম শিবানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রতিবন্ধী ছাত্র সুশান্ত মাইতির লড়াইয়ের সম্বল মনের জোর। তাকে উৎসাহ জোগাচ্ছে সহপাঠীরাও। সুশান্তর পরীক্ষাকেন্দ্র দশগ্রাম সতীশচন্দ্র হাইস্কুলে। বাবা তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর হাতে লেখার শক্তি না থাকায় ‘রাইটার’ নিয়েছে সুশান্ত।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সবং শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

বাবার সঙ্গে সুশান্ত। নিজস্ব চিত্র

ছ’মাস বয়সেই হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ বছর পর্যন্ত উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু ছিল না। জড়িয়ে যায় কথাও। শরীরী প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে সেই কিশোরই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে।

Advertisement

সবংয়ের মশাগ্রাম শিবানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রতিবন্ধী ছাত্র সুশান্ত মাইতির লড়াইয়ের সম্বল মনের জোর। তাকে উৎসাহ জোগাচ্ছে সহপাঠীরাও। সুশান্তর পরীক্ষাকেন্দ্র দশগ্রাম সতীশচন্দ্র হাইস্কুলে। বাবা তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর হাতে লেখার শক্তি না থাকায় ‘রাইটার’ নিয়েছে সুশান্ত। ছেলের মনের জোরে ভরসা রেখে স্বপ্ন পূরণের আশায় বাবা অপূর্ব মাইতি ও মা উজ্জ্বলা মাইতি। সুশান্তর জন্য গর্বিত স্কুলের তার স্কুলের শিক্ষকেরাও।

সুশান্তরা দুই ভাই। বাবা অপূর্ব মাইতি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাড়িতে অভাব। জন্মের ছ’মাস বয়সে হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল সুশান্তর। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, পোলিও থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সুশান্ত। তা জেনে ভেঙে পড়েছিলেন অপূর্ব ও উজ্জ্বলা। তবে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে শুরু হয়েছিল লড়াই। উজ্জ্বলা বলছিলেন, “পাঁচ বছর বয়সেও হাঁটতে পারেনি ও। বাঁশ বেঁধে ধরে-ধরে ওকে হাঁটাতাম। ছ’বছর বয়সে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিই। ওর বাবা কোলে করে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেত।” এখন অবশ্য সরকারের তরফে ট্রাই সাইকেল পেয়েছে সুশান্ত। কিন্তু শান্তনু ভালভাসে আর পাঁচজন বন্ধুর মতো হেঁটে স্কুলে যেতে। তাই বাবার কাঁধে ভর দিয়ে বাড়ির পাশেই স্কুলে যায় সে। বাঁ হাতে লেখার চেষ্টাও করে। কিন্তু হাতের লেখা অস্পষ্ট, গতিও কম। তাই মাধ্যমিকে রাইটার নিয়েছে এই লড়াকু ছাত্র। মশাগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু অধিকারী বলেন, “অনেকেই এমন প্রতিবন্ধকতা থাকলে পড়াশোনা করে না। কিন্তু সুশান্তর মনের জোর অনেক বেশি। তাই প্রতিবন্ধকতা জয় করে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। এটা অন্য পড়ুয়াদের উৎসাহ দেবে।”

Advertisement

শিক্ষক হতে চায় সুশান্ত। কিন্তু অভাবের সংসারে পঙ্গু ছেলের উচ্চ শিক্ষা কত দূর এগোতে তা নিয়ে সংশয়ে বাবা-মা। অপূর্ব বলেন, “আমাদের অবর্তমানে বড় ছেলের কী হবে এটাই ভাবনা।” সুশান্ত স্বপ্নপূরণে মরিয়া। সে বলছে, “অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করব আমি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement