হুকিংয়ের সেচ পাম্পে আয় কমছে বিদ্যুৎ দফতরের। নিজস্ব চিত্র
গোটা মহকুমায় বিদ্যুতের মাসিক চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ ইউনিট। তার মধ্যে চাষের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা ১ কোটি ২০ লক্ষ ইউনিট। সেই বিদ্যুৎ কিনতে খরচ পড়ে সাড়ে আট কোটি টাকা। কিন্তু টাকা আদায় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ চুরি যায় প্রায় ছ’কোটি টাকার।
এই পরিসংখ্যান ঘাটাল মহকুমার। আর বিদ্যুৎ দফতরের হিসেব বলে দিচ্ছে, প্রতি মাসে একটা মহকুমাতেই বিদ্যুৎ চুরির পরিমাণ কতটা! পশ্চিমে মেদিনীপুরে বিদ্যুৎ দফতরের মোট চারটি বিভাগ— খড়্গপুর, মেদিনীপুর, বেলদা ও ঘাটাল। বিদ্যুৎ চুরি হয় প্রতিটি মহকুমার কম-বেশি সব ব্লকেই। মাসের হিসাব বলছে, বিদ্যুৎ চুরির অঙ্কটা ২৫ কোটি টাকার! তার উপর রয়েছে বকেয়ার অঙ্ক।
গৃহস্থের বাড়ি-দোকানের পাশাপাশি চাষের কাজের জন্য হুকিং তাই বিদ্যুৎ দফতরের বড় মাথাব্যথা। বোরোচাষের মরসুমে হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে সেচ পাম্প চালানোর প্রবণতা বাড়ে। লাফিয়ে বাড়ে রাজস্বে ক্ষতির অঙ্কটাও। এমনিতেই চাষের জন্য বিদ্যুৎ দফতর ভর্তুকি দেয়। গৃহস্থের বাড়িতে সংযোগের ক্ষেত্রে ইউনিট পিছু খরচ যেখানে সাড়ে ৭ টাকা, সেখানে চাষের বিদ্যুতে ইউনিট পিছু খরচ ৪ টাকা ৭৫ পয়সা। তার উপর চাষের কাজে দেদার বিদ্যুৎ চুরি চলায় বিদ্যুৎ দফতরের আয় ধাক্কা খায়। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার চিরঞ্জীব বন্দ্যেপাধ্যায় বলেন, “চাষিরা চাইলেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন। তাও অনেকে অনৈতিক ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করে বিপদ ডেকে আনেন। আমরা সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করি ন্যায্য ভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন, অন্যের ক্ষতি করে নয়।”
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, শুধু ঘাটাল মহকুমাতেই সাড়ে ৮ হাজার শ্যালো-নলকূপ রয়েছে। কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক চাষের জন্য পাম্প বসিয়েছেন, কারও লক্ষ্য আবার ব্যবসা। একাংশ চাষি নিয়ম মেনে বৈধ সংযোগ নিয়ে, মাসে মাসে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকেই ঘুরপথে বিদ্যুৎ চুরি করছেন বলে বিদ্যুৎ দফতর জানাচ্ছে। ঘাটালের দেওয়ানচক, মনসুকা থেকে চন্দ্রকোনার কৃষ্ণপুর, ঝাঁকরা এবং দাসপুরের নাড়াজোল, রাজনগর থেকে সোনাখালির একাংশে এই প্রবণতা বেশি। বিদ্যুৎ দফতরের হিসেব বলছে, একটি শ্যালো দিনে ১০-১২ ঘন্টা চলে। ৫ হর্স পাওয়ারের শ্যালো মেশিন চললে দিনে ৪৫০-৫০০ টাকার বিদ্যুৎ পোড়ে। বাণিজ্যিক ভাবে অনেকেই শ্যালো পাম্প ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে চাষিদের থেকে চুক্তি মতো টাকা আদায় করেন পাম্প মালিকরা। কিন্তু হুকিংয়ের জেরে ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয় বিদ্যুৎ দফতর।
চাষিদের একটা অংশ মানছেন এই প্রবণতায় আখেরে ক্ষতি। রাজনগরের এক প্রবীণ চাষির কথায়, ‘‘সরকার তো সব বন্দোবস্তই করে দিয়েছে। তারপরেও বিদ্যুৎ চুরি চলছে। ওভারলোডের জেরে পুড়ছে ট্রান্সফর্মার, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।’’
তবু হুঁশ ফিরছে কই! বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, বিপদের বিষয়টি বুঝিয়েই চাষের কাজে বৈধ সংযোগ নেওয়ার জন্য প্রচার চালানো হবে।