মন্দিরতলা শ্মশানঘাট। নিজস্ব চিত্র
খাতায়-কলমে আগেই হয়েছে উদ্বোধন। কথা ছিল শহরে মুখ্যমন্ত্রী এলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। তবে এখনও চালু হল না খড়্গপুরের মন্দিরতলা শ্মশানঘাটে গড়ে ওঠা বৈদ্যুতিক চুল্লি!
সেটি কবে চালু হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত ৯ ডিসেম্বর শহরের রাবণ ময়দানে এক প্রশাসনিক জনসভায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। পুরসভার দাবি ছিল, ওই সভা থেকেই এই বৈদ্যুতিক চুল্লির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও সেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।
পূর্ত দফতরের দাবি, গত সেপ্টেম্বরে বীরসিংহে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই খাতায়-কলমে ওই চুল্লির উদ্বোধন হয়েছিল। অবশ্য চুল্লি চালু না করেই ওই উদ্বোধন করা হয়েছিল। এখনও ওই বৈদ্যুতিক চুল্লি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নিয়োগ করা হয়নি প্রশিক্ষিত কর্মী। এমন পরিস্থিতিতে ওই চুল্লি দ্রুত চালুর দাবি জোরাল হচ্ছে।
প্রায় ২ একর জায়গার উপরে অবস্থিত এই শ্মশানটি এক সময়ে পঞ্চায়েত এলাকায় ছিল। এই শ্মশানের উপরে শহরের খরিদা, সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, ওল্ড সেটলমেন্ট, নিউ সেটলমেন্ট, ছত্তিসপাড়া, কুমোরপাড়া, বিধানপল্লি, ভগবানপুরের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা নির্ভরশীল। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬টি মৃতদেহ দাহ করা হয়। এখনও খোলা আকাশে মৃতদেহ দাহ করায় দূষণ ছড়ায়। শহরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা মনীশ চক্রবর্তী বলেন, “শবদাহ করলে যে দূষণ হয় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ যখন শেষ হয়েছে তা দ্রুত চালু করা উচিৎ।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ নাগাদ ওই চুল্লির বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছিলেন পুরপ্রধান। তার পরে ২০১৭ সালে চুল্লির অনুমোদন হয়। প্রায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে পূর্ত দফতর ওই বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ করেছে। ওই টাকায় দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লি গড়া হয়েছে। এজন্য ১৫ মিটার চওড়া ও ২৫ মিটার লম্বা জায়গা লেগেছে। গড়া হয়েছে সিমেন্টের একটি বড় আকারের জলাধার। এই প্রকল্পের ইমারতি কাজের জন্য ৮৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর চুল্লির বিদ্যুতিক কাজের জন্য খরচ করা হয়েছে ৬৮ লক্ষ টাকা। এজন্য একটি ট্রান্সফরমারও বসানো হয়েছে। সমগ্র কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পূর্ত দফতরকে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈদ্যুতিক চুল্লির ভিতরে যাবতীয় কাজ শেষে এখন ট্রান্সফরমারও বসেছে।
শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ৬ ঘণ্টা চুল্লি চালু রাখতে হবে। সঙ্গে নিযুক্ত করতে হবে একজন প্রশিক্ষিত কর্মী। এই কর্মী নিয়োগ ও যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সামলাবে পুরসভা। পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অম্বিকা পাত্র বলেন, “বৈদ্যুতিক চুল্লির নির্মাণকাজ শেষে খাতায়-কলমে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করলেই হয়। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে পুরসভাকে এই চুল্লি হস্তান্তর করব। তার পরে পুরসভা কর্মী নিয়োগ করলে আমাদের যে সংস্থা এই চুল্লি গড়েছে তাঁরা প্রশিক্ষণ দেবে।” বিষয়টি শহরের পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”