কাজটুকুই বাঁচুক, আবেদন অভিমানী কবির

ঝুমুর গানের কদর কমেনি। বরং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পীরা নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজছেন বলে দাবি রাজ্যের। অথচ সরকারের দাক্ষিণ্য-নজর আজও পড়েনি জঙ্গলমহলের কুড়মি সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতোর উপর।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১৪:৪৭
Share:

মগ্ন: বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

ঝুমুর গানের কদর কমেনি। বরং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পীরা নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজছেন বলে দাবি রাজ্যের। অথচ সরকারের দাক্ষিণ্য-নজর আজও পড়েনি জঙ্গলমহলের কুড়মি সাহিত্যিক ললিতমোহন মাহাতোর উপর। আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ এখন অভিমানী। সম্প্রতি তিনি চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তাঁর সাহিত্যকর্মগুলি অন্তত বাঁচিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করুক সরকার, সেই আবেদন জানিয়ে। তবে উত্তর এখনও আসেনি।

Advertisement

‘আমার নাকফুলটা হারাঞ গেল কলাবনির বনে’— বিখ্যাত ঝুমুর গানটি লিখেছিলেন ললিতমোহন মাহাতো। ইন্দ্রাণী মাহাতো ও লক্ষ্মীকান্ত মাহাতোর যুগলকণ্ঠে ২০০০ সালে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল। জঙ্গলমহলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সে গান বাংলা-ঝাড়খণ্ড-বিহার-ওড়িশায় জনপ্রিয়। কলকাতার শ্রোতারাও এক সময় মজেছিলেন ‘নাকফুল’-এ।

আশির দশক থেকে শতাধিক জনপ্রিয় ঝুমুর গানের স্রষ্টা ললিতবাবু। তাঁর লেখা গান গেয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন ঝুমুর গানের বহু শিল্পী। শুধু আড়ালে রয়ে গিয়েছেন কবি নিজে। জঙ্গলমহলের বহু শিল্পীকে লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় সরকারি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ললিতবাবুকে আজ পর্যন্ত কোনও রকম সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ঝাড়খণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে কুড়মালি ভাষা বিভাগে ললিতবাবুর লেখা একটি নাটক পড়ানো হয়। অথচ নিজের রাজ্যে তিনি আজও উপেক্ষিত।

Advertisement

১৯৯৮ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত লিখে চলেছেন ললিতবাবু। প্রচার বিমুখ মানুষটির বিপুল সাহিত্যকর্মের সিকিভাগও প্রকাশিত হয়নি। জনপ্রিয় গানের রচয়িতাকে এখন আর চেনেই না জঙ্গলমহল। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিমানী ললিতমোহন লিখেছেন, “আমার দিন ঘনিয়ে আসছে। অন্তত সরকারি খরচে আমার লেখাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে দিন।”

ললিতবাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া গ্রামে। ছাত্র জীবনে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের পত্রিকায় তাঁর লেখা একটি গল্প প্রথম ছেপে বেরোয়। সেই শুরু। তারপর ঝাড়গ্রাম অশোক বিদ্যাপীঠে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক শিক্ষকতা করেছেন তিনি। নিয়মিত চালিয়ে গিয়েছেন সাহিত্যচর্চা। অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ, নাটক লিখেছেন। আর লিখেছেন ঝুমুর গান। যে গানে সুর পেয়েছে মূলবাসীদের জীবনযন্ত্রণা। জঙ্গলমহলের নিজস্ব ধারার রোমান্টিকতা। দেবাশিস মাহাতো ও পূর্ণিমা মাহাতোর কণ্ঠে আজও বাজে ‘পহিল পিরিত বড়ই মিঠা লাগে’ (প্রথম প্রেম বড়ই মধুময়) বা ‘ঝুমুর সম্রাট’ বিজয় মাহাতোর গাওয়া, ‘কাঠ নিয়ে বাজার গেলে, পেটে দু’টো দানা মিলে/ বনে বনে ঘুরেঁ ঘুরেঁ গেল গটা জাহানটা’।

কবির ছোট ছেলে দেবাশিস মাহাতো নিজেও ঝুমুর গানের শিল্পী। তিনিও মানছেন, “বাবার মূল্যায়ন হয়নি। অথচ ওঁর এক একটা গান অসম্ভব জনপ্রিয়।” ঝুমুর গায়িকা ইন্দ্রাণী মাহাতো বলেন, “ললিতবাবুর লেখা ‘নাকফুলটা’ গানটি আমাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। এখনও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে বাজে সেই গান। ললিতবাবু যোগ্য সম্মান পেলে আমাদের ভাল লাগবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement