কোলাঘাটের ছাই-পুকুর থেকেই ট্রাকে বোঝাই করা হয় ছাই। নিজস্ব চিত্র।
‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’ এই প্রবাদ বাক্য সত্যি প্রমাণ করে ছাইয়ের দৌলতেই ভাঁড়ার পূর্ণ করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ!
অতীতে ছাই-পুকুরগুলি খালি করতে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করতে হত। কিন্তু জেলা পরিষদ সেই ছাই-পুকুর লিজে দিয়ে বার্ষিক প্রায় দু’কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ঘরে তুলেছে চলতি অর্থবর্ষে। পরবর্তী অর্থবর্ষে টাকার পরিমাণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পৌঁছে যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। পোড়া কয়লা ছাই হিসেবে বিভিন্ন পাইপ লাইনের মাধ্যমে গিয়ে পড়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট পাঁচটি ছাই-খাদান বা ছাই-পুকুরে। আমোলহান্ডা পঞ্চায়েতের বাবুয়া গ্রামে রয়েছে এই রকম দু’টি ছাই-পুকুর। বারবহলা গ্রামে রয়েছে তিনটি ছাই-পুকুর। বাবুয়া গ্রামের দু’টি ছাই-পুকুর বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ছাই মিশ্রিত জল বারবহলা গ্রামের তিনটি ছাই-পুকুরে পড়ছে।
বারবাহলার ফোর-বি ছাই-পুকুরটি সম্পূর্ণভাবে ভরে যাওয়ার কারণে জেলা পরিষদ থেকে সেই ছাই-পুকুর পরিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২২ সালে সেগুলি পরিষ্কার করার জন্য কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তরফে ব্যয় করা হয়েছিল মোটা অঙ্কের টাকা। ২০২৩ সালে সেই ছাই-পুকুরকেই ‘নো কস্ট’ পদ্ধতিতে কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। ওই বছর জেলা পরিষদের কোষাগার থেকে কোনও টাকা খরচ না হলেও ছাই বিক্রি করে মোটা টাকা মুনাফা করে বেসরকারি একটি সংস্থা। ওই বছর স্বল্প টাকা ঘরে আসে জেলা পরিষদের।
এর পর জেলা পরিষদের তরফ থেকে ছাই বিক্রি করার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। কলকাতার একটি সংস্থা ৩৭ টাকা ৬৮ পয়সা প্রতি এম-কিউ দরে ছাই-পুকুর কাটার অনুমতি পায়। এর প্রথম কিস্তির টাকা প্রায় ৭০ লক্ষ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে জেলা পরিষদের তহবিলে। চলতি বছরেই ছাই-পুকুর কাটা সম্পন্ন হলে আরও তিন কিস্তিতে জমা পড়বে, যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এই ছাই কোলাঘাট থেকে পাড়ি দিচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া-সহ একাধিক জেলায়।
মূলত নিচু জমি ভরাট করার কাজে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। হাওড়া ও নদিয়ার বেশ কিছু জায়গায় ছাই এর সঙ্গে সিমেন্ট ও একাধিক রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। নিচু জমি ভরাটে ছাই এর চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটি দিয়ে নিচু জমি ভরাট করলে ন্যূনতম আট বছর লেগে যায় বাড়ি তৈরির অনুকূল মাটি তৈরি করতে। কিন্তু ছাই দিয়ে খালি জমি ভরাট করলে দু’-তিন সপ্তাহ জল দিলেই তা সহজেই বসে যায় এবং এক মাসের মধ্যেই সেখানে বাড়ি তৈরি করা যায়।
তা ছাড়া, পোড়া মাটির ইটের দাম প্রায় ১০-১২ টাকা। সেখানে ছাইয়ের তৈরি ইটের দাম দাঁড়াচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকা। দাম অনেকটা কম হওয়ায় ছাই এর ইটের দিকে ঝুঁকছে নির্মাণকারী সংস্থাগুলি। ফলে বিভিন্ন কাজে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের খাদান থেকে প্রতিদিনই গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ ট্রাক ছাই বিক্রি হচ্ছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, ‘‘এক সময় এই ছাই পরিষ্কার করতে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা খরচ হতো। আমরা পরিস্থিতি বদলে ফেলতে পেরেছি। এখন সেই ছাই বিক্রি করেই প্রায় দু কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আসছে জেলা পরিষদের তহবিলে।’’
(চলবে)