শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
পর্যটন থেকে কাজু, ফুল থেকে বন্যা ভাঙন মোকাবিলা— সবেতেই ‘শূন্য’ প্রাপ্তি শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের।
গত জুন মাসে মিটেছে লোকসভা ভোট পর্ব। পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবি হলেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি লোকসভা আসনেই পদ্ম ফুটেছে। তাই কেন্দ্রীয় বাজেটে এই জেলা ‘পুরস্কার’ হিসাবে কিছু পায় কি না, তার নজর ছিল জেলাবাসীর। তবে ভোটের মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তৃতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার যে বাজেট পেশ করেছে, তাতে রাজ্যের পাশাপাশি শুভেন্দুর ‘জয়ী’ জেলাও ‘বঞ্চিত’।
মঙ্গলবার লোকসভায় বাজেট ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তাতে স্থান পেয়েছে পূর্ব মেদিনীরপুর লাগোয়া রাজ্য ওড়িশার পর্যটন। কিন্তু সংলগ্ন এ রাজ্যের উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও পর্যটন নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। অথচ ভৌগোলিক অবস্থানগত বিশেষ ফারাক নেই দিঘা, মন্দারমণির সঙ্গে পুরীর মতো পর্যটন কেন্দ্রের। ওল্ড এবং নিউ দিঘা মিলিয়ে আড়াই হাজারের কাছাকাছি হোটেল এবং লজ রয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যখন দিঘাকে ঢেলে সাজানোর তৎপরতা চলছে সে সময় কেন্দ্রীয় বাজেটে পূর্ব মেদিনীপুরের পর্যটন স্থান না পাওয়ায় হতাশ পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলে। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি সুশান্ত পাত্র বলেন, ‘‘মেরিন ড্রাইভ থেকে শুরু করে জগন্নাথ মন্দির, কত কিছুই না রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে দিঘায়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যদি কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দিতেন, তাহলে পর্যটনের দিক থেকে অনেকটাই এগনো যেত।’’
উল্লেখ্য, গত বছর বাজেটে উপকূলবর্তী এলাকায় ম্যানগ্রোভ লাগানোয় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে সেই ম্যানগ্রোভ রোপণ কর্মসূচি হওয়ার কথা। তবে দিঘার সংলগ্ন এলাকায় বকেয়া টাকা না মেলায় ওই প্রকল্পে লাগানো সেই ম্যানগ্রোভও প্রায় সম্পূর্ণ নষ্ট হতে বসেছে।
হতাশ হয়েছেন কাজু কারবারিরাও। কাঁথি-১ ব্লক, গোটা রামনগর বিধানসভা এলাকা জুড়ে কাজু চাষের পাশাপাশি প্রক্রিয়াকরণ কারবার চলে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ক্লাস্টার গড়ে ওঠার কথা। এবারের বাজেটেও সে সম্পর্কে উল্লেখ নেই। ‘কন্টাই কাজু অ্যাসোসিয়েশনে’র চেয়ারম্যান শেখ সাত্তার বলছেন, ‘‘এমনিতেই কাজুর উপরে জিএসটি বেড়েছে। সেই বর্ধিত জিএসটি কমানো এবং কাজু প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের হাল ফেরানো নিয়ে বাজেটে দিশা নেই।’’
গত বছর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ফুল চাষে কোন কোন জায়গায় গুরুত্ব দেওয়া যায় তা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপরেও জেলার ফুল বলয় কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়া ব্লকে ফুল চাষ নিয়ে কিছু হয়নি বলে অভিযোগ চাষিদের। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলছেন, ‘‘গতবার বাজেটেরই রূপায়ণ হল না।’’
এবার লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি কেন্দ্রই পেয়েছে বিজেপি। জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে ১৫টিতে এগিয়ে পদ্ম শিবির। এমন পরিস্থিতিতে সেই জেলা কেন্দ্রের বাজেটে কোনও ক্ষেত্রে স্থান না পাওয়ায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেছেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে এক বিজেপি নেতা বলেছিলেন কাঁথি আর তমলুক আসন মোদীজিকে উপহার দিতে। উপহার পেয়ে উনি পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের পাল্টা হিসাবে বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের দাবি, ‘‘পরপর কয়েকবার রাজ্যকে ঢেলে দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এদেরে দিলে, এরা নিতে জানে না।’’