ফরমালিনের কাঁটা বিঁধছে শুটকি ব্যবসায়

অভিযোগের তির জুনপুটের শুটকি প্রস্তুতকারকদের একাংশের দিকে। এর ফলে ত্রিপুরা, অসম-সহ ভিন রাজ্যের শুটকির পাইকারি ক্রেতারা জুনপুটের শুটকি কেনার জন্য আগের মত আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share:

জুনপুটে একটি শুটকির ফার্ম।

উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি এবং অসম, ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বেশকিছু রাজ্য এমনকী বিদেশেও শুটকি রফতানিতে পূর্ব মেদিনীপুরের জুনপুটের সুনাম রয়েছে। সেই সুনাম এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। আর এর কারণ, শুটকি মাছের সংরক্ষণে ফরমালিন, মেটাসিড, থাইমেট, হামলার মতো কীটনাশক মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

অভিযোগের তির জুনপুটের শুটকি প্রস্তুতকারকদের একাংশের দিকে। এর ফলে ত্রিপুরা, অসম-সহ ভিন রাজ্যের শুটকির পাইকারি ক্রেতারা জুনপুটের শুটকি কেনার জন্য আগের মত আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এই শিল্পের সঙ্গে কাঁথি মহকুমার লক্ষাধিক মানুষ যুক্ত। এই অবস্থায় শুটকি প্রস্তুতকারকদের অনেকের জীবন-জীবিকা সঙ্কটের মুখে। একাধিক শুটকি প্রস্তুতকারকদের অভিযোগ, বেশি মুনাফার লোভে এক শ্রেণির শুটকি ব্যবসায়ী এ কাজ করছে। ওই সব শুটকি প্রস্তুতকারকদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরব হয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে সরব হয়েছে বেশ কিছু মৎস্যজীবী সংগঠনও।

দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সহ সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘কিছু শুটকি প্রস্তুতকারক ফরমালিন-সহ অন্য কীটনাশক ব্যবহার করছে। আমরা ওই সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাঁথির মহকুমাশাসক ও সহ মৎস্য অধিকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছি।’’

Advertisement

কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি তমালতরু দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘শুটকির গুদামগুলিতে প্রশাসন অভিযান চালাক। ফরমালিন বা কীটনাশক মেশানো শুটকি বাজেয়াপ্ত করুক। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হোক সেই শুটকি প্রস্তুতকারককে।’’

সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা মাছে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠায় অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সে রাজ্যে রফতানির জন্য মজুত সব মাছের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। অন্ধ্র মৎস দফতরের কমিশনার রামশঙ্কর নায়েক জানান, রাজ্য থেকে বাইরে পাঠানো সব মাছের বাক্স এ বার থেকে গুণমান সার্টিফিকেট-সহ সিল করা হবে। এ রাজ্যে মাছের বড় আড়ত হাওড়ায়। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, সেখান থেকে আসা মাছে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে এখানেই, হাওড়ায়। ভাগাড় কাণ্ডের পর ফরমালিন মেশানো মাংস নিয়ে এ রাজ্যে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। এ বার মাছ-শুটকিতে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগ ওঠায় চিন্তিত শুটকির ক্রেতারা।

জুনপুটের কেশব বর বলেন, “শুটকিতে পোকা বা ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণ ঠেকাতেই আমরা কেমিক্যাল ব্যবহার করি। কিন্তু তার ফলে কী হতে পারে তা জানা নেই।’’

পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় শুটকি বাজার এগরার বালিঘাই। অসম, ত্রিপুরা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এখানে আসেন। ফরমালিন ব্যবহারের খবরে সেই বাজারে শুটকি বিক্রিতে রীতিমত প্রভাব পড়েছে।

মৎস্য দফতরের সহ মৎস্য অধিকর্তা রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “আমরা এ নিয়ে সচেতনতার অভিযান শুরু করেছি। মৎস্যজীবীদেরও বুঝিয়ে বলা হয়েছে। আগের তুলনায় ফরমালিন বা কীটনাশক ব্যবহার কমেছে। শুটকিতে ফরমালিন ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় আমরা ব্যারাকপুর মৎস্য গবেষণাগারে চিঠি দিয়েছি। শুটকিতে ফরমালিন আছে কি না তা ধরার কোনও যন্ত্র থাকলে এখানে পাঠাতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement