কড়াকড়ি: শুনশান ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথার মোড় (ডান দিকে)। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
সকাল ৭টা। প্রায় শুনশান কলেজ মাঠ ও তার আশেপাশ। অন্য দিন এখানেই বাজার বসে। রাজাবাজার এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। শয়ে শয়ে লোকের ভিড় হয়।
বেলা ১০টা। প্রায় শুনশান কালেক্টরেট মোড়ও। এই করোনা-কালেও এখানে পা ফেলা যায় না। যানজটে হাঁসফাঁস করে গোটা চত্বর।
আনলক-পর্বের মাঝে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে সার্বিক লকডাউনের প্রথম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই শুনশান ছিল শহর মেদিনীপুর। দোকান-বাজার সব বন্ধ। গণপরিবহণও বন্ধ ছিল। রাস্তায় রাস্তায় চলেছে পুলিশি টহলদারি। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোলেই ধরপাকড় করেছে পুলিশ। চলেছে নাকা চেকিং। ড্রোন উড়িয়েও নজরদারি চালানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার মানছেন, ‘‘লকডাউনে যাতে কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য না করেন, সে দিকে নজর রাখতেই ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।’’
জেলা জুড়ে ৫৫টি এলাকায় নাকা চেকিংয়ের বন্দোবস্ত ছিল। এ দিন নানা প্রান্তে লকডাউন ভাঙায় একশোরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কর্নেলগোলায় মাংসের দোকান খুলেছিলেন এক ব্যবসায়ী। দোকান বন্ধ করিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। শহরের পাশাপাশি কেশপুর, শালবনি, মেদিনীপুর গ্রামীণ প্রভৃতি এলাকায় পুলিশের কড়াকড়ি দেখা গিয়েছে। কোথাও দোকান-বাজার খোলেনি। এ দিন জেলার কোথাও বাস, অটো, টোটো চলেনি। লোকজনও বাধ্য না হলে পথে বেরোননি।
লকডাউনে শুনশান ছিল অরণ্যশহর-সহ ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকাও। ওষুধ দোকান বাদে সব দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। তবে সকালে ঝাড়গ্রাম শহরে সংবাদপত্রের হকারদের আটকানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। জরুরি পরিষেবার আওতায় থাকা সংবাদপত্র বিলিতে বাধা দেন কিছু পুলিশকর্মী। হকারদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শহরের ছিমছাম মোড়, পাঁচমাথার মোড়-সহ যে সব এলাকায় রোজ সংবাদপত্র বিক্রেতারা বসেন, তাঁদের এ দিন উঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সংবাদপত্রের এজেন্ট মুকুল মাইতি বলেন, ‘‘বাধা পেয়ে কাজ ব্যাহত হয়।’’
অরণ্যশহর ও জেলার সর্বত্রই এ দিন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি ছিল। কিছু রাস্তায় ব্যারিকেড করে পুলিশ মোতায়েন ছিল। যাঁরা পথে বেরিয়েছিলেন তাঁদের পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়। সকালে জেলা প্রশাসনের তরফে জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক দেবাশিস চৌধুরী শহরের লকডাউন পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। বিকেলে মহকুমাশাসক (সদর) সুবর্ণ রায় শহরের বিভিন্ন মাঠে জমায়েত রয়েছে কি-না তা ঘুরে দেখেন। পুলিশ জানায়, এ দিন জেলায় ধরপাকড় করা হয়নি। তবে বিনা কারণে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, বা মাস্ক ছাড়া বেরিয়েছিলেন, তাঁদের লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে পুলিশ। প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন বাজার ও রাস্তা জীবাণুমুক্তও করা হয়।