দখলদারি আর জঞ্জালে রুদ্ধ নিকাশি

জবরদখলকারীদের দাপটে অবরুদ্ধ নিকাশি নালা। ফি বছর বৃষ্টির জমা জলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছায় শহরবাসীদের। জেলা ভাগের পর প্রায় তেরো বছর কেটে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের সদর শহর তমলুকে আজও গড়ে ওঠেনি আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা। শহরের কোনও কোনও এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে। তাতে বদলায়নি শহরের নিকাশি চিত্র।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০১:১১
Share:

জঞ্জালে রুদ্ধ নিকাশি নালা। তমলুক পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

জবরদখলকারীদের দাপটে অবরুদ্ধ নিকাশি নালা। ফি বছর বৃষ্টির জমা জলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছায় শহরবাসীদের।

Advertisement

জেলা ভাগের পর প্রায় তেরো বছর কেটে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের সদর শহর তমলুকে আজও গড়ে ওঠেনি আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা। শহরের কোনও কোনও এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে। তাতে বদলায়নি শহরের নিকাশি চিত্র।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রূপনারায়ণের তীরে গড়ে ওঠা এই শহরে একাধিক নিকাশি নালা রয়েছে। তবে যথার্থ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবে আজও শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভৌগোলিকভাবে তমলুক শহরের উত্তর দিকে রয়েছে গঙ্গাখালি, পায়রাটুঙ্গি খাল আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে শঙ্করআড়া, নারায়ণপুর খাল। শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে যাওয়া এই খালগুলি রূপনারায়ণের সঙ্গে যুক্ত। এই বড় খালগুলির সঙ্গে যুক্ত শহরের অসংখ্য ছোট ও মাঝারি নিকাশি নালা। বর্ষাকালে শহরের জল নিকাশে এই খালগুলিই প্রধান ভরসা।

Advertisement

কিন্তু বেআইনি নির্মাণের দরুন শহরের বিভিন্ন নিকাশিনালাগুলি বুঝে যাচ্ছে। এর কারণ কী? শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, শুধু জবরদখলকারী নয়, খোদ পুরসভার উদ্যোগেই নিকাশি নালার উপরে দোকান ঘর তৈরি করা হয়েছে। তমলুক শহরের শঙ্করআড়া খালের সঙ্গে যুক্ত একটি নিকাশি খাল জেলা হাসপাতালের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক পার হয়ে ধারিন্দা এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে। ওই খালের দু’ধারেই গজিয়ে উঠেছে বেআইনি দোকান ঘর ও বসতবাড়ি। দোকান ও বাড়ির আবর্জনা স্তূপাকার হয়ে জমছে নালার গর্ভে। মজে যাওয়া নালা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা খাল সংস্কারে উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর ধারিন্দা এলাকায় জল জমে। শঙ্করআড়া খালের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি শাখা নিকাশি খাল শঙ্করআড়া বাসস্ট্যান্ডের কিছুটা পূর্ব দিক থেকে ইন্দিরা কলোনি, পদুমবসান হয়ে বয়ে গিয়েছে পার্বতীপুর এলাকা পর্যন্ত। ওই খালের দু’পাশে রয়েছে পুরসভার ৮, ৯, ১২ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। শঙ্করআড়া বাস স্টপেজের কিছুটা পূর্বে ওই নিকাশি খালের একাংশের উপরে পুরসভার উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল মার্কেট কমপ্লেক্স। ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা জলে ডুবে যায়।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা মধুসূদন প্রামাণিকের অভিযোগ, “এই এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে মাত্র ২০ মিনিট বৃষ্টি হলেই এলাকায় হাঁটু সমান জল জমে যায়। জল সরতেও প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে বর্ষাকালে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। পুরসভা এই সমস্যার সমাধানের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। একইভাবে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পদুমবসান এলাকার বাসিন্দা যুগল পালের বক্তব্য, “ওয়ার্ডের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে পায়রাটুঙ্গি খাল। ”

একইভাবে, শঙ্করআড়া খালের সঙ্গে যুক্ত জেলা হাসপাতালের পশ্চিম দিক ও হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে সমান্তরালভাবে থাকা নিকাশি খালটি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গিয়েছে। শহরের বাসিন্দা জয়দেব মাজির অভিযোগ, “জেলা হাসপাতালের পাশে ওই নিকাশিখালটির একাংশ দখল করে একাধিক নির্মাণ রয়েছে। ওই নিকাশি খালের কিছুটা অংশ পাকা করা হয়েছে। তবে পুরসভা খালে জমে থাকা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করে না।”

তমলুক শহরের উত্তরদিক দিয়ে বয়ে যাওয়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি খাল হল পায়রাটুঙ্গি খাল। কয়েকবছর আগে সেচ দফতরের উদ্যোগে খালটি সংস্কার করা হয়। যদিও বেআইনি দখলদারদের দাপটে শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া ওই খালের সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। পায়রাটুঙ্গি খালের সঙ্গে তমলুক রাজবাড়ির খাটপুকুর নাসা খালের একদিকের অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বহু দোকানঘর ও বসতবাড়ি। ফলে ওই খালের দু’ধারের বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাও ক্রমশ বেহাল হয়ে উঠছে।

শহরের বাসিন্দাদের মতে, শহরের পাশেই রূপনারায়ণ নদী। তাই পরিকল্পনা করে সহজেই শহরে আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেত। কিন্তু পুরসভার উদ্যোগহীনতার জন্যই নালাগুলি মজে যাচ্ছে। এমনকী শহরের মধ্যে ও সম্প্রসারিত এলাকায় রাস্তার ধারে প্রচুর বহুতল বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ এলাকায় নতুন বাড়ি তৈরির সময় নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির জন্য জায়গা রাখা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সব জেনেও পুরসভা নীরব দর্শক। তমলুক পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রদ্যোত্‌ দের অভিযোগ, “শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়নের নামে টাকার অপব্যয় হচ্ছে। অথচ আজও পুরসভা শহরের উন্নয়নে কোনও সার্বিক পরিকল্পনা করতে পারেনি।”

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্য জেলা বা মহকুমা শহরের মতো তমলুকে রাস্তার দু’ধারে পাকা নিকাশি নালা (হাইড্রেন) নেই। ফলে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তার দু’ধারের নিচু ভাঙা ফুটপাথের উপর দিয়েই জল বয়ে যায়। এরফলে রাস্তারও ক্ষতি হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে কিছু মেরামতির কাজ করেই দায় সারা হয়। ফলে শহরে নিকাশি সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করছে। শহরের রাস্তাঘাট ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন-সহ সৌন্দর্যায়নের জন্য অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হোক।

তমলুকের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় জানান, পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় নিকাশিখালের একাংশ বেদখল হওয়ার সমস্যা রয়েছে। তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ শুরু হয়েছে। শহরের বাকি ৭টি ওয়ার্ডেও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এরফলে শহরের অনেকটা অংশে নিকাশির সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিত্‌ দত্তের অভিযোগ, “এই ওয়ার্ডে নিকাশি নালার যে কাজ হচ্ছে, তা নিম্নমানের। ফলে জল জমার সমস্যার বিশেষ সমাধান হবে বলে মনে হয় না।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর তমলুক’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ,

জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement