শ্রেয়ান সামন্ত।
মায়ের কোলে বসেই খেলছিল বছর দুয়েকের শিশুটি। হঠাৎই তীব্র কান্না। সঙ্গে বমি। কিছুক্ষণের মধ্যে ছটফট করতে করতে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে যায় ছোট্ট দেহটা। পড়িমড়ি করে ছেলেকে গিয়ে হাসপাতালে ছোটেন বাবা-মা। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, পথেই মারা গিয়েছে তাঁদের আদরের শ্রেয়ান।
ছেলের মৃত্যুশোক স্তব্ধ করে দেয় বাবা-মাকে। কিন্তু সেই আঘাত সামলেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ছেলের দেহ দান করবেন। ছেলে আর ফিরবে না। কিন্তু প্রিয় সন্তানের হয়তো বেঁচে থাকবে অন্য কারও শরীরে। শেষমেশ ছেলের দেহ দান করতে পারেননি শিবনাথ ও চন্দনা সামন্ত। তবে চক্ষুদান হয়েছে। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সয়ে এমন সচেতন সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পরিবার-পরিচিত সকলেই।
পাঁশকুড়ার হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের কনকাবাগিচা গ্রামের বাসিন্দা শিবনাথ একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। একান্নবর্তী পরিবারের বড় ছেলে তিনি। শিবনাথের একমাত্র ছেলে শ্রেয়ানের বয়স হয়েছিল ১ বছর ১০ মাস। পরিবারে সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ শিবনাথের স্ত্রী চন্দনা ছেলেকে ভাত খাওয়ানোর তোড়জোড় করছিলেন। মায়ের কোলেই ছিল শ্রেয়ান। খাওয়ার আগেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে সে। ছেলেকে নানাভাবে ভোলানোর চেষ্টা করেন চন্দনা। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতেই বমি করতে থাকে শ্রেয়ান। একটু পরেই কোলেই নেতিয়ে পড়ে সে।
শিবনাথ বলছিলেন, ‘‘ওর মা আর আমি সিদ্ধান্ত নিই ছেলের দেহ দান করব। সে জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও পরে কলকাতার এসএসকেএমে ফোন করি। কিন্তু দু’জায়গা থেকেই বলা হয় আমাদেরই দেহ সেখানে পৌঁছে দিতে হবে।’’ শিবনাথ জানান, দূরত্বের কারণে এবং গোটা পরিবারে শোকের মধ্যে তা কতদূর সম্ভব হবে ভেবে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ছেলের চোখ দু’টিই শুধু দান করবেন। সেই মতো শ্রেয়ানের কাকা বিশ্বনাথ সামন্ত যোগাযোগ করেন হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম নেত্র নিরাময় নিকেতনে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা হাজির হন সামন্ত বাড়িতে। ছোট্ট শ্রেয়ানের চক্ষুদান পত্রে সই করেন বাবা। সম্মতি দেন মা-ও। ছেলের চক্ষুদান করে চিকিৎসক দলের কাছে শোকার্ত বাবা-মার একটাই আর্তি, ‘‘আমার ছেলের চোখ যাকে দান করা হবে তাকে যেন একটি বার আমাদের দেখতে দেওয়া হয়।’’ চন্দনা বলছিলেন, ‘‘আমার শ্রেয়ানের চোখ দিয়ে যে পৃথিবীর আলো দেখবে, তার মধ্যেই বেঁচে থাকবে আমার শ্রেয়াণ।’’ সন্তানহারা বাবা-মায়ের আর্জি রাখার আশ্বাস দিয়েছেন ওই চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র।