সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে গন্ডগোলের দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
পথদুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বড় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। তাতেই গোঁসা রোগীর আত্মীয়দের। ওই চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল কয়েক জনের বিরুদ্ধে। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১ ব্লকের কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। অভিযোগ, শুধু মারধরেই থমকে থাকেননি রোগীর পরিজনেরা। চিকিৎসককে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ঘটনার কথা জানিয়ে ভগবানপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মিন্টু দে নামে প্রহৃত চিকিৎসক। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীও। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে ভগবানপুর-বাজকুল সড়কে একটি বাইক দুর্ঘটনা হয়। আহত বাইক চালককে উদ্ধার করে কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তাঁর পরিচিত কয়েক জন। কর্তব্যরত চিকিৎসক মিন্টু আহত যুবকের চিকিৎসা করেন। কিন্তু যেই উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য রোগীকে তাম্রলিপ্ত জেলা সদর মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করেন, শুরু হয় অশান্তি। অভিযোগ, ওই চিকিৎসকের সঙ্গে প্রথমে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান রোগীর পরিবার-পরিজনেরা। আচমকাই তাঁদের মধ্যে কেউ ডাক্তারবাবুর গায়ে হাত তোলেন। মারের চোটে চেয়ার উল্টে পড়ে যান মিন্টু। হাসপাতালের তরফে খবর দেওয়া হয় থানায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রহৃত চিকিৎসক বলেন, ‘‘দুপুর দেড়টা নাগাদ আমাদের এক জন নার্স ফোন করে জানান যে বাইক দুর্ঘটনায় আহত এক জন রোগী এসেছেন। খবর পেয়েই আমি ছুটে আসি। রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখি, তিনি মত্ত অবস্থায় রয়েছেন। অর্থাৎ, ওই অবস্থাতে বাইক চালিয়েছেন। যা আইনত অপরাধ। যাই হোক, পরীক্ষা করে মনে হয়েছে, ওঁর কাঁধের হাড় ভেঙেছে। তাই এক্স-রে করিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে স্পেশ্যালিস্ট ডাক্তারকে দেখিয়ে নিতে বলি। কিন্তু কেন আমি তাঁকে অন্য হাসপাতালের রেফার করছি, তাই নিয়েই স্থানীয় কয়েক জন আমার উপর চড়াও হন। আমাকে মারধর করেন।’’ চিকিৎসকের দাবি, মারের চোটে তিনি এখন একটি কানে কম শুনতে পাচ্ছেন। তিনি জানান, ওই ঘটনার পর তিনি আতঙ্কিত। নিজের কর্তব্যপালন করেও এ ভাবে অপমানিত হবেন, ভাবতে পারেননি বলে জানান মিন্টু। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান। চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওঁরা আমাকে হুমকি দিয়েছেন প্রাণে মেরে ফেলার। সবটাই পুলিশকে জানিয়েছি।” যদিও এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এগরা মহকুমার পুলিশ আধিকারিক দেবীদয়াল কুন্ডু বলেন, ‘‘কাজলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখনও কেউ আটক বা গ্রেফতার হননি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ় দেখে খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।’’