অমিয়ভূষণ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
জীবদ্দশায় রোগীকে দিয়েছেন চিকিৎসা পরিষেবা। দুর্ঘটনায় তমলুক জেলা হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের মস্তিষ্কের মৃত্যু (ব্রেন ডেথ) হয়েছে। মৃত্যুর পরেও অঙ্গদানের মাধ্যমে ওই চিকিৎসক ব্রতী রইলেন রোগীকে পরিষেবা দেওয়ায়। করোনা আবহে অঙ্গদানের ওই প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবেই সম্পন্ন হয়েছে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক তথা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অমিয়ভূষণ সরকার (৬৪) গত বৃহস্পতিবার টোটোয় চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তমলুক রেল স্টেশনের কাছে একটি আবাসনে থাকে তাঁর পরিবার। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে যাওয়ার সময় স্টেশন রোডের মোড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স উল্টো দিক থেকে এসে ওই চিকিৎসকের টোটোয় ধাক্কা মারে। তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। স্থানীয়েরা প্রথমে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার সকালে অমিয়ভূষণকে কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ওই দিনই তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অমিয়ভূষণের ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। এ পরেই তাঁর পরিবার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন। অমিয়বাবুর স্ত্রী এবং দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে আরণ্যক চিকিৎসক এবং ছোট আলেখ্য ইঞ্জিনিয়ার। আরণ্যক জানান, তাঁর বাবার দুই কিডনি, হৃৎপিণ্ড, লিভার, চোখের কর্নিয়া এবং ত্বক দান করা হয়েছে।
আরণ্যকের কথায়, ‘‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকেরা ব্রেন ডেথের কথা জানান। এর পরে বাবার অঙ্গদানের বিষয়ে আমার মা ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন।’’
নিজে চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে অঙ্গদানের বিষয়ে জানতেন আরণ্যক। তিনি এ বিষয়ে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তাঁর বাবার মেডিক্যাল কলেজের সহপাঠী ও সহকর্মীদের মাধ্যমে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে জানান। করোনা আবহে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে অঙ্গদান করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই অঙ্গদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বাবার অঙ্গদান প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁরা চিন্তায় ছিলেন বলে জানাচ্ছেন আরণ্যক। তবে স্বাস্থ্য দফতর ও বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে তা সম্পূর্ণ হওয়া খুশি অমিয়বাবুর পরিবার। আরণ্যক বলছেন, ‘‘বাবার অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্য রোগীরা উপকৃত হবে, এটা আমাদের কাছে আশার কথা।’’
অমিয়ভূষণের পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের সুপার ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, ‘‘জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে উনি সুনামের সঙ্গে কর্তব্য পালন করেছিলেন। ওঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তবে এমন পরিস্থিতিতেও যেভাবে অঙ্গদানের জন্য তাঁর পরিবার এগিয়ে এসেছেন, তাতে ওঁদের কুর্ণিশ জানাচ্ছি।’’