তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী নন দিলীপ ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বিক্ষোভরত তৃণমূলের মহিলাকর্মীদের বাপবাপান্ত করে আবার বিতর্কে দিলীপ ঘোষ। তবে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী নন তিনি। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ জানিয়ে দিলেন, তিনি যে মেজাজে রয়েছেন, সেই মেজাজে থাকবেন। এ বার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘বাড়িতে ঢুকে মারব। না-হলে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে চৌরাস্তায় মারব।’’ তাঁর এ হেন মন্তব্যে দল কি কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করছে? বিজেপি নেতার জবাব, ‘‘দিলীপ ঘোষের পার্টি লাগে না।’’
শুক্রবার খড়্গপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন দিলীপ। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। মূলত মহিলারাই বিক্ষোভের সামনে ছিলেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, প্রাক্তন সাংসদ কেন রাস্তার উদ্বোধন করছেন? সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে এলাকায় দেখা যেত না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। এক মহিলা প্রশ্ন করেন, “হঠাৎ করে আপনি কেন রাস্তা উদ্বোধন করতে এসেছেন? অন্য সময় তো দেখা যায় না।” জবাবে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দিলীপ বলেন, “টাকা দিয়েছি। কারও বাপের টাকা নয়।” প্রাক্তন সাংসদের এ হেন মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন সেই মহিলা। তিনি পাল্টা বলেন, “আপনি বাপ তুলে কেন কথা বলছেন?” প্রাক্তন সাংসদের গলায় জোর এনে বলেন, “চোদ্দোপুরুষ তুলব।” প্রচণ্ড হট্টগোল শুরু হলে দিলীপের মন্তব্য, “বেশি ন্যাকামি করছে। টাকা দিয়েছি। ভিখারি পার্টি নই। চেঁচাবে না। গলা টিপে দেব।”
বিজেপি নেতার ওই মন্তব্যে শোরগোল শুরু হয়। তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্ষমা না চাইলে দিলীপ যেখানে যাবেন, তাদের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাবেন। তবে সে সবে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন দিলীপ। শনিবার সকালে খড়্গপুর শহরে চা চক্রে বসে তিনি জানান, মেজাজ হারিয়ে তিনি কোনও কথা বলেনি। মেজাজ ঠিক রেখেই বলেছেন এবং যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। দিলীপের কথায়, ‘‘আমি খড়্গপুরে দাঁড়িয়ে বলে দিচ্ছি, এই রকমের বেয়াদবি যদি কেউ করতে আসে, সে যে পার্টির হোক, বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে এসে রাস্তায় মারব। সে যত বড় নেতাই হোক। দিলীপ ঘোষ কারও বাপের খায় না। কারও জমিদারিতে পা দেয় না।’’ হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে হলে ভদ্র ভাবে কর। ছ্যাবলামি করলে আমরাও জানি কাকে কী ভাবে সিধে করতে হয়।’’
দিলীপের দাবি, যে রাস্তার উদ্বোধনে তিনি গিয়েছিলেন, সেটি তাঁর এমপি ল্যাডের টাকায় তৈরি। সেখানকার কাউন্সিলর বা প্রাক্তন বিধায়ক (প্রদীপ সরকার) রাস্তা তৈরি করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিধায়ক থাকাকালীন কিছু করেনি। সে বলছে, আমি রাস্তা বানিয়েছি! আর বোর্ডে লেখা আছে ‘দিলীপ ঘোষ’। দম থাকলে ড্রেনটা করে দেখা। দিলীপ ঘোষ রাস্তা করে দিয়েছে।’’
রাজনীতিক দিলীপের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তবে তিনি নিজে জানিয়েছেন, যত দিন রাজনীতিতে থাকবেন, এই ‘মেজাজে’ থাকবেন। যা নিয়ে তৃণমূলের তরফে প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপের মন্তব্য, ‘‘এটাই বিজেপির সংস্কৃতি। খড়্গপুর যে সংস্কৃতি কখনও মেনে নেবে না।’’