কুলিয়ানা গ্রামে নিজের বাড়িতে দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
আগামী ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে জঙ্গলমহলে ফের ঝাঁপাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। বুধবার ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে দলীয় সাংগঠনিক বৈঠকে এমনই বার্তা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাজ্যনেত্রী ভারতী ঘোষ।
সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজ্য সভাপতি জানিয়ে দেন, বিধানসভার ফল দেখে মুষড়ে পড়লে চলবে না। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে যেভাবে সক্রিয় ভাবে নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে দলের কাজ করছিলেন, এখন থেকেই সেইভাবে পুরোদমে কাজ শুরু করতে হবে। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় পদ্ম শিবিরে সাফল্য এসেছিল। ভোটের আগে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। এ বারও একই কায়দায় যেসব পঞ্চায়েতে শাসক দল ক্ষমতায় সেখানে, দুর্নীতির বিষয়ে সরব হতে বলেছেন রাজ্য সভাপতি। এ দিন বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘‘প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্লক অফিস ঘেরাও করতে হবে। আমিও সেই কর্মসূচিতে হাজির থাকব।’’ বুথের সংগঠনকে মজবুত করার নির্দেশও দিয়েছেন দিলীপ।
বিধানসভা ভোটের পরে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের বিরোধী সদস্যদের নিজেদের দলে টেনে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পঞ্চায়েত দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে সাঁকরাইল ব্লকের ছত্রি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছে শাসকদল। এমনকি নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইলে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আবার গেরুয়া শিবিরের একাংশও ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে গিয়েছেন। যদিও দিলীপের দাবি, ‘‘এখনও কোথাও পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি তৃণমূল। ওরা চক্রান্ত করছে, ভয় দেখাচ্ছে, মিথ্যা মামলা করছে। আমরা কর্মীদের ধরে রেখেছি। বিজেপিকে ভাঙা এত সহজ নয়।’’ এ দিন হাড়দা এলাকার বিজেপির কয়েকজন এসে রাজ্য সভাপতির কাছে অভিযোগ জানান, তৃণমূলের লোকজন মারার হুমকি দিচ্ছে। দিলীপ অবশ্য জানিয়ে দেন, ‘‘পাল্টা মার দিতে হবে। সবাই বাঁশ তৈরি রাখুন।’’
ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে জেলা বিজেপির একাংশ নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের পর রাজ্য বা জেলার নেতারা পাশে থাকছেন না। যার ফলে বিজেপি কর্মীদের অনেকে এখনও ঘরছাড়া রয়েছেন। যদিও দিলীপ এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘যেখানে গন্ডগোল সেখানেই পার্টি গিয়ে পৌঁছেছে। তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে। থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পুলিশি অত্যাচার চলছে। তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ ও অন্দোলন করছি।’’ তবে এদিন দিলীপের বৈঠকে ছিলেন না বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক অনুরণ সেনাপতি। এমনকি ভার্চুয়ালিও অনুরণ ছিলেন না। যদিও অনুরণ বলেন, ‘‘বৈঠক ছিল বলে আমাকে কেউ জানায়নি।’’ আর জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো বলেন, ‘‘সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করব না।’’
এ দিন গোপীবল্লভপুরে বৈঠক শেষে বিকেলে দিলীপ বেলিয়াবেড়া ব্লকের কুলিয়ানা গ্রামে নিজের বাড়িতে যান। সেখানে খোশ মেজাজে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটান।