টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন সাংসদ। মেদিনীপুর শহরের কেরানিতোলায়। নিজস্ব চিত্র
আগে পুরসভা নির্বাচন হোক। তারপর বিধানসভা উপ-নির্বাচন। মেদিনীপুর থেকে তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সোমবার মেদিনীপুরে দিলীপ বলেন, ‘‘প্রথম তো লোকাল বডির নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ, উন্নয়ন তো ওখান থেকেই হয়।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘দু’বছর, তিন বছর হয়ে গিয়েছে, এক- একটা পুরসভাতে, নির্বাচন হয়নি। এই অধিকার কে দিয়েছে ওঁদের (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের)? মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরন করার?’’ পুর- প্রশাসক বসানো নিয়ে তাঁর খোঁচা, ‘‘সব জায়গায় ওঁদের লোক চাই। নৈতিক, অনৈতিক, পিছনের দরজা দিয়ে, সামনের দরজা দিয়ে। বসে লুট করে খাও! পুরসভাগুলি তো লুটছেন ওঁনারা!’’
এ দিন সকালে মেদিনীপুরে প্রাতভ্রমণে বেরোন দিলীপ। যান কলেজ মাঠে। পরে যান কেরানিতলার করোনা টিকাকরণ কেন্দ্রে। টিকা নিতে আসা মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তৃণমূল দ্রুত উপ- নির্বাচনের দাবি করছে, কমিশনেও যাচ্ছে। এ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘যারা কেবল দিদিমণিকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে হবে বলে নির্বাচন চাইছেন, লোকের প্রাণকে বলি রেখে, যখন নির্বাচন চলছিল তখন তারাই চিৎকার করছিলেন ‘এই করোনা নিয়ে চলে এসেছে’, ‘বাইরে থেকে এসে লোককে মেরে ফেলছে’ এই বলে। আর এখন? আপনার তাড়া?’’ তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘পুরসভা নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের রাজ্য সরকার পরিস্কার ভাবে মতামত জানিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত আছে। নির্বাচন নিশ্চিত ভাবেই পুরসভাগুলির হবে। কিন্তু বিজেপি একপ্রকার জোর করে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে আটকে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে নির্বাচিত হয়ে আসতে না- পারেন, তার অভিসন্ধি করছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার দাবিতে ফের দিল্লিতে দরবার করতে যাচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। এ নিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘বৃষ্টি হবে, বন্যা হবে, বৈঠক হবে, সমাধান হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার শর্ত দিয়েছে। আর কথা বলতে চাইছেন না ভয়ে! একটা টাকাও বার করবেন না। সব দলের কাজে লাগাবেন।’’
এদিন দিলীপকে ফুটবল পায়েও দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়? বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘দিদির প্রেরণায় সবাই পিছনের দিকে এগিয়ে চলছেন!’’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটা পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। যার দাম চার হাজার কোটি টাকা। টুকরো পাথরের। আফগানিস্তানের কয়েক হাজার টাকা এখানে পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য যথেষ্ট সতর্ক নয় বলেই আমার মনে হয়।’’ এদিন দিলীপ যখন টিকাকরণ কেন্দ্রে পরিদর্শনে যান, তখন তাঁর মুখে মাস্ক ছিল না। কেন মাস্ক নেই, প্রশ্ন তোলেন একজন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তাঁকে জানান, টিকার দু’টো ডোজ়ই তাঁর নেওয়া হয়ে গিয়েছে। বেলার দিকে গৌড়ীয় মঠে যান তিনি। জন্মাষ্টমীর পুজো দেন। এ দিন দুপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে যান দিলীপ। দাঁতনে নিহত দলীয় কর্মীর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেন। দলের তরফে ওই আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে।
মেদিনীপুরের কর্মসূচি সেরে খড়্গপুরে আসেন দিলীপ। প্রথমে শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির একটি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন। সেখানে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিভিন্ন দল ছেড়ে জনা চল্লিশেক মহিলা বিজেপিতে যোগ দেন। পরে আসেন রেল বাংলোয় চলা নিজের সাংসদ কার্যালয়ে। এ দিন ওই রেল বাংলোর প্রাঙ্গণেই জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান করে বিজেপি। সেই অনুষ্ঠানে মাতেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। উপস্থিত হয়েছিলেন শহরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়।