বুধবার ঘাটালে তৃণমূল সাংসদ দেব। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ বা ‘রূপশ্রী’ হোক, কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’-এর মতো নারীকেন্দ্রিক সরকারি প্রকল্পগুলির কোনও মানেই নেই, যদি না রাষ্ট্র নারীদের রক্ষা করতে পারে। ঘাটাল থেকে আরজি কর প্রসঙ্গে এমনটাই জানালেন তৃণমূল সাংসদ দেব। ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নতুন ডায়ালিসিস যন্ত্র উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। আরজি করের ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছেন দেব। জানিয়েছেন, তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে। ধর্ষণ আটকাতে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদল বৈঠকে বসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বুধবার দেবকে আরজি কর আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আরজি করে যা হয়েছে খুবই দুঃখজনক, নিন্দনীয়। তার প্রতিবাদ করাই উচিত। সাধারণ মানুষ সেই আবেগ থেকেই পথে নেমেছেন। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়। ধর্ষকেরা এই অপরাধ করার আগে যেন ভয় পায়। এটা তো শুধু বাংলা বা অন্য কোনও রাজ্যের বিষয় নয়, এটা সারা দেশের বিষয়। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’ বা ‘বেটি বচাও বেটি পড়াও’-এর কোনও মানেই নেই, যদি দেশের মেয়েদের আমরা রক্ষা করতে না পারি।’’
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কী করণীয়, তা-ও জানিয়েছেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের উচিত এখনই সর্বদল বৈঠক ডাকা এবং সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা। ধর্ষণ আটকাতে এবং ধর্ষকের শাস্তি ঠিক করতে আলোচনা হোক। দেশের সংবিধানে কঠোর নিয়ম আসা উচিত। ধর্ষণবিরোধী বিল আনা দরকার। আমাদের দেশে নারীদের জন্য এত প্রকল্প। তা সত্ত্বেও আমরা নারীদের রক্ষা করতে পারছি না। দেশে প্রতি দিন ধর্ষণ হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি শান্তিপ্রিয় আন্দোলনকে সমর্থন করছি। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল অশান্তির চেষ্টা করছে। এটা বাংলার সরকার ফেলা বা বাংলার সরকারকে হেনস্থা করার সময় নয়। এটা শুধু বাংলার লজ্জা নয়, ভারতের প্রতি দলের প্রতি রাজ্যের লজ্জা। এই আন্দোলনকে আমরা যেন মনে রেখে দিতে পারি।’’
উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁকে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে এবং হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পথে নেমেছেন ডাক্তারেরা। রাজ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক ঝান্ডাকে দূরে রেখে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় কিছুটা অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সেই আবহে দলের সাংসদ দেবের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, আরজি কর আবহে কাঞ্চন মল্লিকের বিতর্কিত মন্তব্যে ক্ষমা চেয়েছেন দেব। তিনি বলেন, ‘‘এই কাঞ্চনদাকে আমি চিনি না। আমি যাঁকে চিনতাম, তাঁর সঙ্গে এঁর আকাশপাতাল তফাৎ। উনি যেহেতু আমার দলের নেতা, আমি ওঁর হয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’