ঝাড়গ্রাম স্টেশন লাগোয়া পর্যটন কেন্দ্র। তার পাশেই গাড়ির স্ট্যান্ড। কিন্তু সেখানে নেই ভাড়ার তালিকা। সমস্যায় পড়েন পর্যটকেরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রামের পর্যটনের পালে যেন হাওয়া লেগেছে। আগে থেকে বুকিং করা না থাকলে ছুটির মরসুমে হোটেলের ঘর পেতে হলে রীতিমতো কালঘাম ছোটে পর্যটকদের। অরণ্য শহরে পৌঁছলে অন্য এক সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। সে সমস্যা পরিবহণের।
পর্যটন কেন্দ্রগুলি ছড়িয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায়। অভিযোগ, এখনও যথাযথ পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদের। সম্প্রতি কলকাতা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন সৌগত মাহালদার ও রাখি মাহালদার। এই দম্পতি বলেন, ‘‘হোটেল থেকে বেলপাহাড়ির দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখার জন্য আমাদের গাড়ি করে দেওয়া হল। একদিনের গাড়ি ভাড়া বাবদ তিন হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।’’ অথচ তাঁরা পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই এলাকাগুলি দেখার জন্য ২৪০০ টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে এসেছেন অন্য একদল পর্যটক।
ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ির ঘাগরা, তারাফেনি, কাঁকড়াঝোর, ময়ূরঝরনা, লালজল, খাঁদারানি ঝিল, হদহদি ঝরনা, কেটকি ঝরনা, ঢাঙিকুসুমের মতো এলাকা গুলির দূরত্ব অনেকটাই। কাঁকড়াঝোর বাদে ওই সব এলাকাগুলিতে বাসের যোগাযোগ নেই। কাঁকড়াঝোরে দিনে তিনটি বাস চলে। কয়েকটি এলাকায় দিনে দু’একটি ট্রেকার চলে। ঝাড়গ্রাম থেকে ওই সব এলাকায় যেতে গেলে পর্যটকদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভরসা করতে হয় ভাড়ার গাড়ি বা নিজের গাড়ির উপরেই।
অরণ্য শহর থেকে কিছু জায়গায় টোটো করে যাওয়া যায় বটে, তবে সেখানেও রয়েছে অন্য সমস্যা। টোটো ভাড়ার কোনও নির্দিষ্ট দর নেই। তাই শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির, ১০ কিলোমিটার দূরে ক্রিস গার্ডেন, ১৪ কিলোমিটার দূরে ভেষজ উদ্যান, ৪ কিলোমিটার দূরে চিড়িয়াখানা সহ শহর ও আশেপাশের দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখানোর জন্য টোটোগুলিও ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকে। ঝাড়গ্রাম ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সিদ্ধার্থ রায়, টোটো সংগঠনের নেতা কার্তিক আঢ্য মানছেন, নির্দিষ্ট ভাড়ার দর না-থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক তথা পুরসভার প্রশাসক সুবর্ণ রায় বলেন, ‘‘গাড়ি ও ই-রিকশার ভাড়ার দর নির্দিষ্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।’’
কয়েক বছর আগে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের উদ্যোগে বাতানুকূল বাসে বেলপাহাড়ি ও গোপীবল্লভপুর-নয়াগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কলকাতা থেকে সরাসরি পর্যটকদের নিয়ে এসে একদিনের ওই বাসভ্রমণ পরে বন্ধ হয়ে যায়। পর্যটকদের দাবি, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে যাওয়ার জন্য সরকারি বাসে প্যাকেজের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসের মাধ্যমে দর্শনীয় জায়গাগুলি বেড়ানোর জন্য সার্কিট ট্যুর করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।’’ (চলবে)