হাসপাতলে ‘কিট’ নেই, ডেঙ্গি পরীক্ষায় হয়রানি

ছবিটা কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের। কবে থেকে হাসপাতালে ফের ডেঙ্গি-সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা চালু হবে, সে নিয়ে অনিশ্চিত খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গত বুধবার থেকে ডেঙ্গি-সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষার ‘কিট’ ফুরিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৪
Share:

বিছানা নেই। হাসপাতালের সুপারের ঘরের সামনে মেঝেতে শুয়ে রোগী। নিজস্ব চিত্র

প্রায় প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন পরিজন। অথচ সেই রোগীর রক্তে ডেঙ্গি রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার ‘কিট’ নেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। ফলে কেউ কেউ পরীক্ষা ছাড়াই ফিরছেন বাড়িতে, আবার কাউকে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি পরীক্ষাগারে।

Advertisement

ছবিটা কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের। কবে থেকে হাসপাতালে ফের ডেঙ্গি-সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা চালু হবে, সে নিয়ে অনিশ্চিত খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গত বুধবার থেকে ডেঙ্গি-সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষার ‘কিট’ ফুরিয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরে এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ‘কিট’ না পাওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন।

এ দিকে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহে অন্তত ৩০ জন রোগী অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে এসেছেন। অন্তত ২০০ জন রোগী জ্বরেআক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে ‘কিট’ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে চিন্তা বড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

গত শনিবার অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পিছাবনীর উত্তম মণ্ডল। তাঁর দিদি মাধবী মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালে কিট নেই। তাই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কথা মতোই বাইরের একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে ভাইয়ের ডেঙ্গি সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি। এ জন্য দু-হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’’ একই অভিযোগ দারুয়া এলাকার এক মহিলার। শনিবার বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন তিনি। ওই মহিলার অভিযোগ, ‘‘কিট নেই বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ছেলের যা পরিস্থিতি, তাতে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করানো ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’

কিন্তু যেখানে গত কয়েক দিনে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে ডেঙ্গি পরীক্ষা করার জন্য রক্ত সংগ্রহের কিট কেন মিলছে না! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে পরীক্ষাগারের এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিটি কিটে ৯৬ জনের রক্ত সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু মেশিনে মাত্র ৩৫-৪০ জনের রক্ত পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। এর ফলে রক্ত সংগ্রহের কিট অপচয় হচ্ছে। আর হঠাৎ করে এত রোগী আসায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’’

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘কিটের অভাবে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে সমস্যা হচ্ছে ঠিক। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। দু-একদিনের মধ্যেই কিটের জোগান স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

এদিকে, বেসরকারি পরীক্ষাগারে গিয়ে রোগীর পরিবারের অনেক খরচ হচ্ছে বলে সরব হয়েছে কাঁথি পিপলস ফোরাম। তারা মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সম্প্রতি হাসপাতাল পরিষেবা নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপিও। এ প্রসঙ্গে বিজেপি’র প্রাক্তন জেলা সভাপতি (কাঁথি) তপন মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূল ভোটের রাজনীতিতে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে একেবারেই ব্যর্থ।’’ যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক ও রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানা ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement