বিল মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় তিনশো কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল মকুবের দাবিতে ঝাড়গ্রাম জেলা শাসকের দফতরে আইন অমান্য করলেন কয়েকশো গ্রাহক। বৃহস্পতিবার সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি-র ঝাড়গ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ওই কর্মসূচি হয়। আইন অমান্য করার জন্য বিক্ষোভকারীরা গ্রেফতার হন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত জামিনে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন দুপুরে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা শহরে মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরের সামনে হাজির হন। ব্যারিকেড ভেঙে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে তাঁরা। প্রচুর পুলিশ থাকায় অবশ্য দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সংগঠনের মুখপাত্র তপন রায়ের দাবি, ২০০৮-১১ সালে জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বের সময়ে বিদ্যুৎ মিটারের কোনও মিটার রিডিং নেওয়া হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরেও পরবর্তী দু’বছর ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোনও মিটার রিডিং নেওয়া হয়নি। পরে গ্রাহকদের কাছে বিপুল অঙ্কের বিল পাঠানো হয়। বকেয়া বিলের এককালীন পরিমাণ ৪০ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত। যা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দেওয়া সম্ভব নয়।
অভিযোগ, এই বিলের পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। যার ফলে একজন নিম্ন আয়ের দিনমজুরের বাড়িতে বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ অতি সামান্য হলেও তাঁর কাছে লক্ষাধিক টাকার বিল পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির লাগাতার আন্দোলনের ফলে বছর তিনেক আগে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকের মধ্যে ৫টি ব্লকের ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮২৮ জন গ্রামীণ গ্রাহকের ২০ কোটি ২২ লক্ষ টাকার (২০০৮-র নভেম্বর থেকে ২০১৪-র জুলাই) অনাদায়ী বিল মকুব করে দেয় রাজ্য।
ঝাড়গ্রাম জেলার বাকি তিনটি ব্লকের পাশাপাশি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার গ্রাহকরা এই সুযোগ পাননি। বিল দিতে না পারার জন্য যাঁদের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে বিনা শর্তে ওই সব গ্রাহকদের পুনঃসংযোগ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে মেদিনীপুরে এসে বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জঙ্গলমহলের বকেয়া বিদ্যুতের বিলে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি স্তরে ভাবনা চিন্তা করা হবে। কিন্তু তারপরও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
এ দিন গ্রাহকরা বিক্ষোভ দেখানোর সময় অভিযোগ করতে থাকেন, জঙ্গলমহলের ক্লাব গুলিকে সরকার টাকা দিচ্ছে। মেলা-খেলার জন্য বিপুল খরচ করা হচ্ছে। এই সব খরচ কিছুটা কমিয়ে গ্রামীণ গরিব গ্রাহকদের স্বার্থে বিল মকুবের দাবি ওঠে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। এ দিন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭৩৭ জন বিদ্যুৎ গ্রাহক এসেছিলেন।