tajpur

বন্দর হলেও সংশয় লাভে

উপদেষ্টা সংস্থা তাজপুরে কেবলমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ‘ক্লোজ ভায়াবিলিটি’র কথাই বলেছে। সে জন্য দু’টি উপায়। প্রথমত, ২৫ কিলোমিটার শিপিং চ্যানেল তৈরি করে সাগর তীরে বন্দর নির্মাণ।

Advertisement

কেশব মান্না

তাজপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১০
Share:

তাজপুর বিচ। — ফাইল চিত্র।

মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি পর্যটন শিল্প-নির্ভর তাজপুরের অর্থনীতি। হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামলকুমার দাস বলছেন, ‘‘তাজপুরের বন্দর তৈরি শুরু হলে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হবে। তাতে এলাকার অর্থনীতি এগোবে। তবে কয়েক বছর ধরে এলাকার সব জমির মিউটেশন এবং কনভার্সন বন্ধ রয়েছে। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করতে হবে।’’

Advertisement

তবে বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে প্রশ্নও। কলকাতা বন্দরের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা এইচওডব্লিউই-র রিপোর্ট বলছে, তাজপুরে বন্দর গড়তে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর বন্দর হলেও ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ওড়িশা উপকূলে থাকা টাটা গোষ্ঠীর ১৮ মিটার নাব্যতা যুক্ত সুবর্ণরেখা বন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে তাজপুরকে। ২৫ কিলোমিটার শিপিং চ্যানেল ড্রেজ়িংয়ের বার্ষিক খরচও হবে আকাশছোঁয়া।

বন্দর সূত্রের খবর, উপদেষ্টা সংস্থা তাজপুরে কেবলমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ‘ক্লোজ ভায়াবিলিটি’র কথাই বলেছে। সে জন্য দু’টি উপায়। প্রথমত, ২৫ কিলোমিটার শিপিং চ্যানেল তৈরি করে সাগর তীরে বন্দর নির্মাণ। দ্বিতীয়ত, জলের মধ্যে ১০ কিলোমিটার রেল-রাস্তা তৈরি করে সমুদ্রের মধ্যে বন্দর নির্মাণ করা। যদি শিপিং চ্যানেল তৈরি করতে হয়, তা হলে প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের খরচও ঘাড়ে চাপবে। এই দুই শর্ত মানা হলে ১৬-১৭ মিটার নাব্যতার বন্দর তৈরি সম্ভব তাজপুরে। তবে তা লাভজনক হতে বেশ কয়েক বছর কেটে যাবে।

Advertisement

কেন গভীর সমুদ্র বন্দরই একমাত্র বিকল্প, তা-ও ব্যাখ্যা করেছিল উপদেষ্টা সংস্থা। তাদের মতে, হলদিয়া বন্দরের বর্তমান নাব্যতা ৮.৫ মিটার। যদি তাজপুরে ৯-১০ মিটার নাব্যতার বন্দর হয়, তা হলে কলকাতা-হলদিয়ার পণ্যই সেখানে যাবে। জাহাজিরা এখন কেপসাইজ (দেড় লক্ষ টন পণ্যবাহী) জাহাজ এনে পণ্য খালাসে আগ্রহী। পারাদ্বীপ বন্দরে সেই ধরনের জাহাজ আসে। তার পর ছোট জাহাজে পণ্য আসে হলদিয়া ও কলকাতায়। সুবর্ণরেখাতেও সে রকম জাহাজই আসবে। ফলে তাজপুরকে সফল হতে হলে অন্তত ১৮ মিটার নাব্যতার বন্দর চাই। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, তা কতদিনে উঠে আসবে সংশয় রয়েছে তাতেও। উপদেষ্টা সংস্থার স্পষ্ট প্রশ্ন, গভীর বন্দর নির্মাণের বিপুল খরচ কোথা থেকে আসবে? রেল-রাস্তা এবং বন্দরের পণ্য খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সমস্যা কী ভাবে মিটবে?

বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে কটাক্ষ করছে বিরোধীরাও। বিজেপি নেতা তথা গত বিধানসভা ভোটের রামনগর কেন্দ্র থেকে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী স্বদেশ নায়ক বলেন, ‘‘তাজপুরে বন্দর হবে বলে শুনেছি। আদানি গোষ্ঠী এসে ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু কবে কোথায় হবে কিছুই জানি না। জমি অধিগ্রহণের কাজটুকুই দেখা যায়নি।’’ একই রকম ভাবে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক বলেন, ‘‘তাজপুরে বন্দর প্রকল্পকে স্বাগত। তবে যেখানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়ে মিলে প্রকল্প গড়ে তুলতে পারছে না, সে ক্ষেত্রে ঋণে জর্জরিত রাজ্য সরকারের পক্ষে কীভাবে বন্দর গড়ে তোলা সম্ভব হবে, সেটাই সংশয়।’’ (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement