টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে দয়ানন্দ গরানি। -নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানার প্রত্যন্ত গ্রাম জামিট্যা। যেখানে ভালো করে দু’বেলা দু’ মুঠো ভাত খাওয়ার স্বপ্ন দেখাটাই অলীক কল্পনা। সেই প্রত্যন্ত গ্রামের দয়ানন্দ গরানি ভারতীয় ক্রিকেট দলে থ্রো ডাউন বোলার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।
সুঠাম চেহারা। মাথায় কোঁকড়ানো চুল। ঝড়ের গতিতে বল ছোড়েন দু’হাতেই। ডান হাতে প্রায় ঘন্টায় ১৬০ কিমি গতিতে আর বাঁ হাতে ঘন্টায় ১৩০ কিমি বেগে থ্রো ডাউন করার দক্ষতা রয়েছে এই যুবকের। বছর কয়েক আগে তাঁর জীবনে প্রথম সাফল্য আসে। অন্ধ্রপ্রদেশ রঞ্জি দলে ফিল্ডিং কোচ কাম ফিজিয়ো হিসেবে সুযোগ পান তিনি। ৫ বছর এই কাজে থাকার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দয়ানন্দকে।
এ বারের আইপিএলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব টিমে ছিলেন তিনি। তার পর সোজা ভারতীয় ক্রিকেট দলে থ্রো ডাউন বোলার হিসেবে সুযোগ এসে যায়। শুক্রবার সকালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে গিয়েছেন দয়ানন্দ। সিডনিতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ (২৭ নভেম্বর) দিয়ে শুরু হচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। সবার নজরে বিরাট কোহালি। অনুশীলনে কোহালিকে নাগাড়ে থ্রো ডাউন করে সাহায্য করবেন দয়ানন্দ। তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলাবাসীরাও।
আরও পড়ুন: ফিরছে কপিলদের সেই জার্সি, অস্ট্রেলিয়ায় রেট্রো লুকে দেখা যাবে বিরাটদের
দয়ানন্দের সাফল্যের খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন স্থানীয় সমাজসেবী কোলাঘাট সামাজিক সেবা সমিতির সম্পাদক আবিদার মল্লিক। তিনি দয়ানন্দের বাবা ও মায়ের হাতে ফুলের তোড়া ও মিষ্টি তুলে দেন। আবিদার মল্লিক জানিয়েছেন, দয়ানন্দের সাফল্য প্রত্যন্ত গ্রাম জামিট্যাকে গর্বিত করেছে।
দয়ানন্দের মা আভারানী জানিয়েছেন, ছেলের এই সাফল্যের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কঠিন সংগ্রামের কাহিনি। বাড়ি থেকে কখনও পান্তা ভাত, কখনও মুড়ি বা কখনও দু’পিস রুটি খেয়েই স্থানীয় কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাবে যেতেন দয়ানন্দ ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য। রূপনারায়ণ নদীর ধারে কাঠচরা মাঠে ছিপছিপে গড়নের ছেলেটির অসম্ভব ফিটনেস সবাইকে চমকে দিয়েছিল।
আইপিএলে কুম্বলের দলে ছিলেন দয়ানন্দ। -নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই নিজের থেকেই খুব সুন্দর ম্যাসাজ করতে পারতেন দয়ানন্দ। মিডিয়াম পেস বল করতেন। এই সুবাদে তাঁর কলকাতায় যাওয়া। পরবর্তীকালে পুলিশ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। নিজেকে মূল খেলা থেকে সরিয়ে ফিটনেস ট্রেনিংয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেন দয়ানন্দ। তার পরেই অন্ধ্রপ্রদেশ রঞ্জি দলের ফিল্ডিং কোচ কাম ফিজিয়ো হিসেবে সুযোগ পান। দয়ানন্দের এই সাফল্যের পিছনে ক্লাবের প্রশিক্ষক কোলাঘাটের কৌশিক ভৌমিক-সহ রঞ্জি দলের ট্রেনার সঞ্জীব দাসের অবদান অপরিসীম।
দয়ানন্দর বাবা লক্ষ্মীকান্ত গরানি পেশায় অত্যন্ত সাধারণ একজন কৃষক। সর্বদা ব্যস্ত থাকেন চাষবাসে। ছেলে তাই মায়ের কাছে যাবতীয় আবদার করতেন। আর মা সব সময় চেষ্টা করতেন ছেলের আবদার মেটানোর। এক সময়ে মায়ের কাছ থেকে সামান্য টাকা নিয়ে নিজের লক্ষ্যপূরণের জন্য কলকাতায় চলে এসেছিলেন দয়ানন্দ। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।