Mobile Addiction

মোবাইল ভুলিয়ে মাঠে ফিরিয়েছেন দয়ানন্দ

নেশা দূর করে জামিট্যা গ্রামের যুব সমাজকে মাঠমুখো করছেন দয়ানন্দ। গ্রামের যুবকদের কাছে দয়ানন্দ তাই 'গ্রেট মোটিভেটর'।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ১০:২৩
Share:

জামিট্যার মাঠে ফিটনেস প্রশিক্ষক দয়ানন্দ। নিজস্ব চিত্র।

কোলাঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের জামিট্যা গ্রাম। রূপনারায়ণের পাড়ে এই অখ্যাত গ্রাম রাতারাতি খবরের শিরোনামে। এই গ্রামেরই যুবক দয়ানন্দ গরানী বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের ‘থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট।’ অর্থাৎ ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের যাঁরা লাগাতার প্র্যাকটিস করান ও ‘ফিটনেস’ বজায় রাখতে সাহায্য করেন, তাঁদেরই এক জন দয়ানন্দ।

Advertisement

শুধু ভারতীয় দলেরই নয়, দয়ানন্দ এখন তাঁর গ্রামের বহু যুবকের জীবনের দিশা বদলে দেওয়া জাদুকর। একটা সময় তাঁর গ্রামের অধিকাংশ কিশোর-যুবক রাতদিন বুঁদ হয়ে থাকত মোবাইল গেমে। সেই নেশা দূর করে জামিট্যা গ্রামের যুব সমাজকে মাঠমুখো করছেন দয়ানন্দ। গ্রামের যুবকদের কাছে দয়ানন্দ তাই 'গ্রেট মোটিভেটর'।

রূপনারায়ণের পাড়ের ছোট্ট গ্রাম জামিট্যায় বিকেল হলেই কিশোর, যুবকেরার রূপনারায়ণের চরে বসে পড়ত মোবাইল গেম খেলার জন্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলত খেলা। এ নিয়ে অশান্তির শেষ ছিল না গ্রামের মানুষের।

Advertisement

গ্রামেরই যুবক দয়ানন্দ গরানী ২০২০ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলে থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। নিজে সাফল্যের শিখরেও পৌঁছে গেলেও গ্রামের মোবাইলে ডুবে থাকা যুব সমাজের জন্য চিন্তিত ছিলেন দয়ানন্দ। ২০২১ সালে জামিট্যায় রূপনারায়ণের চরে গড়ে ওঠে জামিট্যা শহিদ মাতঙ্গিনী স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। যার অন্যতম উদ্যোক্তা দয়ানন্দ। বছরের যেটুকু সময় বাড়িতে থাকতেন সেই সময়টা দিতেন মোবাইলমুখী যুবকদের। মোবাইল গেমের ক্ষতিকর দিকগুলি তাঁদের সামনে তুলে ধরতেন। এই নেশা ছাড়াতে সাহায্য করতেন তাঁর প্রেরণাদায়ী কথোপকথনে মাধ্যমে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য গ্রামের ছেলের কথা ফেলতে পারেননি জামিট্যার যুবকেরা। মোবাইল গেম দূরে সরিয়ে রাখেন তাঁরা। জামিট্যা স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সদস্য এখন তাঁরা সকলে। কেউ হাতে তুলে নিয়েছে ব্যাটবল। কেউ যোগ দিয়েছে যোগাসনের ক্লাসে। শুধু ছেলেরাই নয়। দয়ানন্দের ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের কিশোরী, যুবতীরাও মাঠে নেমে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করছেন। ভারত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন দয়ানন্দ। গত রবিবার শ্রীলঙ্কা সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। যে কয়েকটা দিন ছিলেন, অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন মাঠে, গ্রামের যুবকদের সঙ্গে।

জামিট্যার বাসিন্দা সৌম্যজিৎ হাইত একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বলেন,"আমরা দশ-পনেরো জন বন্ধু রূপনারায়ণের ধারে বসে মোবাইলে গেম খেলতাম। দয়াদা আমাদের অনেক করে বুঝিয়েছিলেন মোবাইল ছেড়ে মাঠে নামার জন্য। দাদার কথায় আমরা সবাই এখন বিকেলে-সন্ধ্যায় ক্রিকেট প্র্যাকটিস করি। মোবাইলে গেম খেলি না।" জামিট্যা শহিদ মাতঙ্গিনী স্পোর্টস অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জামিট্যা গ্রামের প্রায় ১০০ ছেলে মেয়ে। অ্যাকাডেমির সম্পাদক শ্যামলেন্দু আদক বলেন,"দয়ানন্দ আমাদের কাছে আদর্শ।’’ আর দয়ানন্দের কথায়,"মাঠ কিছু নেয় না, ফিরিয়ে দেয়। মাঠ আমাকে অনেককিছু দিয়েছে। আমি চাই, যুব সমাজ মোবাইল গেমের থেকে সরে এসে মাঠের খেলায় মন দিক আমার গ্রামের বহু যুবক এখন সেটা করছেন, এটা দেখে আনন্দ পাই।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement