Murder

বৌমার পরকীয়া জেনে ফেলাতেই খুন শাশুড়ি

এসডিপিও বলেন, “বৌমা ও তার বাড়ির পুরোহিত দু’জনে মিলে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে প্রৌঢ়াকে খুন করেছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও করেছিল। দু’জনের আচরণও স্বাভাবিক ছিল।” 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দাসপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৩
Share:

গ্রেফতারের পরে সুস্মিতা ও গোরাচাঁদ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

ঘরে পড়ে বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ। মৃত শাশুড়িকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন বৌমা। রয়েছেন বাড়ির পুরোহিতও।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল দাসপুরের শ্যামসুন্দরপুরের গোস্বামী বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকে কে, কেন বৃদ্ধাকে খুন করল, কী ভাবেই বা পালাল— ধন্দে পড়েন তদন্তকারীরা। তবে রহস্য ভেদে দেরি হল না।

মৌসুমী গোস্বামী (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে শুক্রবার রাতেই মৃতের বৌমা সুস্মিতা ও তার প্রেমিক তথা বাড়ির পুরোহিত গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার অভিযুক্তদের ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। দাসপুর থানার ওসি সুদীপ ঘোষাল ও সিআই দোবাশিস ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন এসডিপিও অগ্নীশ্বর চৌধুরী। হাজির করা হয় অভিযুক্তদের। এসডিপিও বলেন, “বৌমা ও তার বাড়ির পুরোহিত দু’জনে মিলে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে প্রৌঢ়াকে খুন করেছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও করেছিল। দু’জনের আচরণও স্বাভাবিক ছিল।”

Advertisement

বেশ কয়েক বছর আগে শুভজিৎ গোস্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুস্মিতার। দম্পতির এক পাঁচ বছরের মেয়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির পুরোহিত গোরাচাঁদের সঙ্গে বছর চারেক হল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল সুস্মিতার। কয়েক মাস আগে সেই সম্পর্কের ঘটনা জেনে প্রতিবাদ করেন মৌসুমী। শাশুড়ি-বৌমার অশান্তি শুরু হয়। শাশুড়িকে খুনের ছক কষে সুস্মিতা।

শুক্রবার শুভজিৎ বাড়িতে ছিলেন না। সুস্মিতা শ্বশুরকে জানায়, পুরোহিত আসবেন না। তিনি যেন বাড়ির পুজো করে নেন। শ্বশুর নিমাই গোস্বামী পুজো করছিলেন। বৃদ্ধার স্নান করে ঘরে যান। তখনই হাজির হয় গোরাচাঁদ। ঘরে ঢুকে প্রৌঢ়াকে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা করে সে। বাড়িতে থাকা একটি ধারালো ছুরি দিয়ে প্রৌঢ়ার গলার নলি কেটে দেওয়া হয়। প্রমাণ লোপাটের জন্য সুস্মিতা ও গোরাচাঁদ মিলে বাড়ির আসবাব লন্ডভন্ড করে দেয়। খুনের পরে সুস্মিতা শাড়ি পাল্টে রান্না ঘরে চলে যায়। চম্পট দেয় গোরাচাঁদ। এরপরে খুনের বিষয়টি জানাজানি হয়। পুলিশ আসে।

সুস্মিতা পুলিশের কাছে দাবি করে, বেশ কয়েক গ্রাম সোনার গয়না, টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু একটু খোঁজাখুঁজির পরে বাড়িতেই তাঁর কানের দুল পাওয়া যায়। রান্নাঘরে মেলে খুনে ব্যবহ়ত ছুরির খাপ। সেই খাপে কোনও ছুরি না মেলায় সন্দেহ হয় পুলিশের। বাড়ির আলমারিগুলিও অক্ষত ছিল। তল্লাশি চালিয়ে বাড়ি থেকেই বাকি সোনার গয়না উদ্ধার হয়। এরই মধ্যে অভিযুক্ত পুরোহিত খুনে ব্যবহৃত ধুতি-পাঞ্জাবি দাসপুর শহরের এক নির্জন জায়গায় পুড়িয়ে সাধারণ পোশাক পরে ঘটনাস্থলে চলে যায়। পুলিশের সন্দেহ এড়াতে তদন্তে সহযোগিতাও করে। পরে সুস্মিতাকে জেরা করার জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়ে সব কথা বলে দেয় সে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement