জলমগ্ন পশ্চিমমহল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র
পুজো শেষ। আজ, সোমবার থেকে খুলছে জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলি। এতেই চিন্তায় পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাটের একাংশ ছাত্র এবং শিক্ষক মহল। কারণ, এক মাসেরও বেশি সময় আগের বন্যার জল এই দুই ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় এখনও জমে রয়েছে। কোনও স্কুল চত্বর রয়েছে ডুবে। আবার কোনও স্কুলের ত্রাণ শিবিরে এখনও দুর্গতরা রয়েছেন। ওই সব এলাকার পড়ুয়াদের পঠনপাঠন কবে থেকে শুরু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর কংসাবতী নদীর বাঁধ চার জায়গায় ভেঙে পাঁশকুড়া জুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। পাঁশকুড়ার পাশাপাশি, বন্যার জলের কোলাঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ঘরবাড়ির পাশাপাশি, বহু স্কুলেও বন্যার জল ঢুকে যায়। বন্যার পর পেরিয়েছে এক মাসেরও বেশি সময়। এখনও জলমগ্ন কোলাঘাটের সাপুয়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেড়িয়াচক পশ্চিম মহল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেড়িয়াচক নরনারায়ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর। সোয়াদিঘি খাল সংলগ্ন দেড়িয়াচক মক্তবে তো এখনও স্কুলের ভিতরেই জল জমে রয়েছে। শুধু এটিই সমস্যার এক মাত্র কারণ নয়, পড়ুয়ার যেসব গ্রাম থেকে আসে, সেগুলিও জলের তলায়। আর পাঁশকুড়ার কামিনাচক, চাকদহ উত্তর পাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, বাড় বাহারপোতার মতো একাধিক স্কুলে এখনও ত্রাণ শিবির চলছে বলে পাঁশকুড়া ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।
আজ, সোমবার থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলি খুলছে। বন্যার জল না নামা এবং ত্রাণ শিবিরের কারণে একাধিক স্কুলে পঠনপাঠন শুরু করা যাবে না। এতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। পশ্চিমমহল গ্রামের বাসিন্দা উমা পট্টনায়েক বলেন, ‘‘আমার মেয়ে পশ্চিমমহল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বন্যার এক মাস পরেও ওই এলাকায় জল নামনি। আমরা নিজেরাও বাড়ি থেকে বেরতে পারছি না। শিশুরা স্কুলে যাবে কী করে? তাছাড়া স্কুলেও তো এখনও জল। মাস খানেক পরেই তৃতীয় পার্বিক মূল্যায়ন। প্রশাসনের উচিৎ অবিলম্বে নিকাশি সচল করে বন্যার জল নামানোর ব্যবস্থা করা। না হলে পড়ুয়ারা স্কুলের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হবে।’’
শুধু পড়াশোনা নয়। বন্যার কারণে মিড ডে মিল থেকেও বঞ্চিত হবে বহু পড়ুয়া। দেড়িয়াচক পশ্চিমমহল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাধেশ্যম ঘড়া বলছেন, ‘‘আমার স্কুলের রান্না ঘর, শৌচাগার এখনও জলের তলায়। কাল থেকে স্কুল খুলবে। স্কুলের সামনেও জল জমে রয়েছে। পড়ুয়ারা কী ভাবে স্কুলে আসবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। ক্লাসরুমের মধ্যেই মিড ডে মিল রান্না করতে হবে।’’
পড়ুয়াদের এই সমস্যার প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলছেন, ‘‘স্কুল খোলার দিনই আমি বন্যা কবলিত এলাকার স্কুলগুলি পরিদর্শনে যাব। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিকল্প পঠনপাঠন ও মিড ডে মিল নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।’’