প্রতীকী ছবি।
আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার হাজার হাজার বাড়ি। সেই বাড়ি মালিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু অভিযোগ, এমন বহু ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন, যাঁদের বাড়ি আদৌও ক্ষতি হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসতেই পদক্ষেপ করেছে তারা। ‘বেগতিক’ দেখে ইতিমধ্যে জেলার অনেকে ক্ষতিপূরণ প্রাপকেরা টাকা ফেরাতে শুরু করেছেন।
তমলুক ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার তদন্ত শেষ হয়েছে এবং মোট ৭০০ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা জমা পড়েছে ব্লক প্রশাসনের কাছে। কিন্তু নুতন তালিকা তৈরির আগেই এই ব্লকের একাধিক ‘ভুয়ো’ ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। তাঁদেরই একাংশ টাকা ফেরাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তমলুকের বিডিও। তমলুক ব্লকের বিডিও গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে অনেকেই ব্যাঙ্ক টাকা ফেরত দিয়েছেন।’’ কিন্তু সেই সংখ্যাটা কত, সে নিয়ে কিছু খোলসা করেননি বিডিও।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় তমলুক ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার ৭৫৫ জনের ব্যাঙ্ক আকাউন্টে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। তাতে দুর্নীতি এবং স্বজন পোষণের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের তালিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তমলুক ব্লকে পদুমপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিঙ্কু মাইতি এবং জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরার নামে ব্যানারও পড়েছিল কয়েকদিন আগে। এর পরেই গত ২২ জুন সোমনাথ পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরে যান।
ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের ব্যাঙ্ক আকাউন্ট হোল্ড করা হয়েছে। যাঁরা এখনও টাকা ফেরত দেননি, তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য কড়া পদক্ষেপ করছে ব্লক প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য সরকারি টাকা পাওয়া যে সব পরিবারের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরানোর জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা করা হবে। আর যে সব পরিবারের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে টাকা তোলার জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। বিডিও গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘আমার ব্লকে যে ৭৫৫ জনের আকাউন্টে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল, তাঁদের অ্যাকাউন্ট হোল্ড করা হয়েছে। টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকেও জানানো হচ্ছে।’’
এ দিকে, টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির তত্ত্বেই যে সিলমোহর পড়ল, তা বলছেন বিজেপি’র জেলা (তমলুক) সহ-সভাপতি আশিস মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ করা হয়েছে বলে আমরা ব্লক প্রশাসনের অভিযোগ জানিয়েছিলাম। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশকে তালিকায় স্থান দিয়ে পঞ্চায়েতের পদাধিকারী তৃণমূল নেতাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক তদন্তের সময় ধরা পড়ার ভয়ে ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের একাংশ এখন টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এতেই তো প্রমাণ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছিল।’’
তমলুক ব্লকে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে টাকা পাওয়ার পর তা ফেরত দেওয়ার ঘটনা নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কেউ কেউ নিজদের লোকদের নাম তালিকায় দিয়েছিলেন। লোভের বশবর্তী হয়ে ওঁরা এটা করেছেন। তবে যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে অথচ টাকা পেয়েছেন, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টাকা ফেরানোর জন্য প্রশাসনও ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’