তাণ্ডব: দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে রামনগরের কাছে উপড়েছে গাছ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কা সত্যি করেই পূর্ব মেদিনীপুরে তাণ্ডব চালাল ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে আমপানের জেরে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। তিনি ভূপতিনগরের বাসিন্দা।
ঝড়ের দাপটে প্রচুর বাড়িঘর, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে তমলুকের বড়বড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা এক মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। শ্রাবণী ঘোষ নামে বছর তেতাল্লিশের ওই মহিলাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের গাছ ভেঙে বাড়িতে পড়ায় এক প্রৌঢ় জখম হন।
ঝড়ের দাপটে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে ও খুটি ভেঙে বুধবার দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন। উপকূল এলাকার ৭৫ হাজার বাসিন্দাকে তাঁদের বাড়ি থেকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র এবং বিভিন্ন স্কুল ভবনে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মতো মঙ্গলবার বিকেল থেকে জেলায় হালকা বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার এবং জেলা প্রশাসনের তরফে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। উপকূলবর্তী এলাকায় বাসিন্দাদের উদ্ধারে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল দিঘা, হলদিয়া, কাঁথি, রামনগর এলাকায়। পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রীও মজুত করা হচ্ছিল। দিঘা উপকূলবর্তী এলাকা এবং হলদিয়ার নয়াচর মিলিয়ে প্রায় ৪১ হাজার বাসিন্দাকে মঙ্গলবার সরানো হয়। নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাটে গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তারের উপরে। পরে বিদ্যুতের ওই খুঁটি ভেঙে পড়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের উপরে। এতে রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
নন্দকুমারের খঞ্চি এলাকার মদন মাইতি হাটের কাছে গাছ ভেঙে ট্রান্সফর্মা-সহ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। ফলে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে ওই এলাকা।
ঝড়ের দাপটে নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গাছ ভেঙে পড়ে। একাধিক জায়গায় রাস্তার উপরে ভেঙে পড়ে ত্রিফলা বাতি। ছিঁড়েছে বিদ্যুতের তার। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে রামনগর-১ ব্লকের শঙ্করপুর সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদপুরের কাছে সমুদ্রের ধারে যে বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল, তার একটা বিশাল অংশের বোল্ডার জলের ধাক্কায় যত্রতত্র ছড়িয়ে গিয়েছে। শঙ্করপুরের কাছে সামুদ্রিক বাঁধ ভেঙে এদিন সকাল থেকে জল ঢুকেছে বসতি এলাকায়। তাজপুর, জলধা, চাঁদপুর, লছিমপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকেছে। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক আধিকারিক এবং সেচ আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এগরা পুরএলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে একাধিক মাটির বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। পুর এলাকায় ১২টি ত্রাণ শিবিরে মোট ৫০০ জনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ড়ের সময় মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান ভগবানপুর-২ ব্লকের পশ্চিম শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছবিরানি শীট (৫৮)।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, তিনি ও ছেলে বাড়িতে ছিলেন। সেই সময় বাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়লে দু’জনই দেওয়াল চাপা পড়েন। মারা যান ওই মহিলা। গুরুতর জখম ছেলেকে মুগবেড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
কাঁথি-১ ব্লকের মাজিলাপুর, নয়াপুট, সাবাসপুট সহ ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার মাটির বাড়ির বাসিন্দাদের আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই এলাকায় কয়েকশো কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। একই সঙ্গে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। খেজুরি-১ ব্লকে বেশকিছু ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে ও, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় খেজুরি-২ এবং নন্দীগ্রাম এলাকায়। রসুলপুর নদীর তীরবর্তী বোগা, নিজকসবা, পাচুড়িয়া এলাকায় প্রচুর কাঁচা বাড়ি ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে। একইরকম অবস্থা নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, কেন্দেমারি এলাকায়।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘প্রাণহানি রুখতে উপকূলবর্তী এলাকার ৭৫ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে। গোটা জেলা জুড়েই ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙেছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’