নন্দীগ্রামের ঘটনায় আহত শ্যামল দাস (বাঁদিকে)। এগরায় রাস্তা অবরোধ বিজেপি’র। নিজস্ব চিত্র
কোথাও আমজনতা। তো কোথাও বিরোধী দলের সদস্য— আমপান দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় জেলার বিভিন্ন জায়াগায় বিক্ষোভকারীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের আশ্রতি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
আমপান ঝড়ে বাড়ি ভাঙার সরকারি ক্ষতপূরণে যে দুর্নীতি হচ্ছে, তা নিয়ে এতদিন সরব হয়েছে বিরোধীরা। সম্প্রতি আমজনতাও পথে নামতে শুরু করেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দাউদপুর পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ। অভিযোগ, তাঁদের উপরে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা কোদালের বাট, লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে হঠাৎ হামলা চালায়। বোমাবাজিরও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, ঘটনায় শ্যামল দাস ও শান্তনু দাস নামে দু’জন আহত হন। পুলিশ আহতদের নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। শ্যামলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চণ্ডীপুরে একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়।
পুলিশ অবশ্য এ দিনের ঘটনায় বোমাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করছে। আর মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পাল। তিনি বলেন, ‘‘দাউদপুরে বিজেপির লোকজন বিজেপির পতাকা নিয়ে স্মারকলিপি দিতে চাইছিলেন। আমাদের দলের সমর্থকেরা কোনও দলীয় পতাকা নিয়ে যেতে বারণ করেন। তাতে বচসা বাধে। কিন্তু কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’’
এ ব্যাপারে বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপিকে আর কিছু করতে হচ্ছে না। তৃণমূল এত বেশি দুর্নীতি করেছে, সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামছেন।’’
অবশ্য শুধু দাউদপুর নয়, গোটা নন্দীগ্রামেই দিনভর তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমপান-দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। এ দিন হলদিয়া-কেন্দেমারি সড়কের হাজরা কাটা মোড়ে এলাকার সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখান। একই অভিযোগে সরব হয়েছেন ভেকুটিয়া মানুষজনও। ক্ষতিপূরণের তালিকায় স্বজনপোষণের অভিযোগে পঞ্চায়েত সদস্য মেহেরান বিবির পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা। আবার, সকাল ১১টা থেকে ভেকুটিয়া-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে প্রায় শ’দুয়েক গ্রামবাসী কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
পটাশপুরে আবার বিজেপি’র কর্মীদের উপরে তৃণমূল সমর্থকদের মারধর এবং বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সেখানে পটাশপুর-অমর্ষি আস্তানা মোড়ে আমজনতাও আমপান দুর্নীতির প্রতিবাদে অবরোধ করেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের টাকা দেওয়া ও দুর্নীতির প্রতিবাদে পটাশপুরের বিডিও’কে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কর্মসূচি ছিল বিজেপি’র। সে জন্য বিকেল ৩টা নাগাদ পটাশপুর-২ ব্লক অফিসের সামনে প্রতাপদিঘী বাজারে বিজেপি নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। অভিযোগ, কর্মসূচির আটকাতে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পুলিশ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি করে। গাড়ি থেকে বিজেপি কর্মী এবং নেতৃত্বকে নামিয়ে লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়।
বিজেপি’র দাবি, হামলায় পটাশপুর-২ ব্লকের পশ্চিম এবং মধ্যম মণ্ডলের সভাপতি-সহ পাঁচ জন গুরুতর জখম হন। আহত বিজেপি কর্মীরা এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবং পটাশপুর থানার ওসি, এগরার এসডিপিও’র অপসারণর দাবিতে এগরা শহরে পথ অবরোধ শুরু
করে বিজেপি। বিজেপি’র জেলা (কাঁথি) সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশের উস্কানিতে বোমা- বন্দুক নিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা কর্মীদের মারধর করেছে। পাঁচজন আহত হয়েছেন। পটাশপুর থানার ওসি এবং এগরার এসডিপিও তৃণমূলের হার্মাদের ভূমিকা নিয়েছেন। ওঁদের অপসারণ করতে হবে।’’
মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে পটাশপুর-২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি মৃণালকান্তি দাস বলেন, ‘‘বিজেপি স্মারকলিপি দেওয়ার নামে প্ররোচনামূলক কথা বলছিল। ফুড কুপন নিতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ করেন। তৃণমূল হামলায় জড়িত নয়।’’ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রসঙ্গ জানতে ফোন করা হয় এগরার এসডিপিও শেখ আখতার আলিকে। তবে তিনি ফোন ধরেননি।