তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জয়ী বাম, শূন্যেই থামল তৃণমূল, খাতা খুলল গেরুয়া  

নির্বাচনে ১৮ টি আসনের মধ্যে ১৫টি পেয়ে সিপিএম প্রভাবিত সিটুর আধিপত্য বজায় থাকলেও বিজেপি প্রভাবিত বিএমএস তিনটি আসন পেয়েছে। আর গতবার ভোটে ১টি আসনে জয়লাভ করলেও এ বার তৃণমূলের ভাঁড়ার শূন্য। যা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:১৭
Share:

হলদিয়া বন্দরের পর এবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কর্মী আধিকারিকদের নিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘রিক্রিয়েশন ক্লাব’-এর নির্বাচনে তিনটি আসন পেয়ে সেখানে খাতা খুলল গেরুয়া শিবির।

Advertisement

নির্বাচনে ১৮ টি আসনের মধ্যে ১৫টি পেয়ে সিপিএম প্রভাবিত সিটুর আধিপত্য বজায় থাকলেও বিজেপি প্রভাবিত বিএমএস তিনটি আসন পেয়েছে। আর গতবার ভোটে ১টি আসনে জয়লাভ করলেও এ বার তৃণমূলের ভাঁড়ার শূন্য। যা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

গত জুন মাসে জেলারই হলদিয়া বন্দরে ‘ডক ইনস্টিটিউট’-এর নির্বাচনে একটি আসনে জিতেঠিল বিএমএস। বন্দরে নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের আধিপত্য বজায় থাকলেও এবার সেখানেও প্রথম খাতা খোলে গেরুয়া শিবির। ১৮ আসনের মধ্যে ৯ টি তৃণমূল, ৮ টি সিটু ও ১ টি আসনে জেতে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ বা বিএমএস। বিজেপিপন্থী হিসেবে পরিচিত ওই শ্রমিক সংগঠনর হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে আসন পাওয়ার পর এবার জেলার অন্যপ্রান্তে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ‘রিক্রিয়েশন ক্লাব’-এর পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ৩টি আসনে জয়লাভ শিল্পাঞ্চলে গেরুয়া শিবিরের শক্তিবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে বলে মনে করচে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

উল্লেখ্য, কাটমানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মেচেদা বাজারে পোস্টার পড়েছিল। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এ হেন ক্ষোভই বিজেপি পন্থী শ্রমিক সংগঠনের উত্থানের মূলে বলে মত তৃণমূলের একাংশের।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থায়ী কর্মী ও আধিকারিকরা রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য। ক্লাবের পরিচালন সমিতির ১৮ জন সদস্য প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সোমবার ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে সিটু প্রভাবিত সংগঠনের ১৮, তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের ১৮ জন এবং বিজেপি প্রভাবিত সংগঠনের ১৮ জন ছাড়াও আরও ৬ জন মিলিয়ে মোট ৬০ জন প্রার্থী ছিলেন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীর বলাকা মঞ্চে এদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ভোট গ্রহণ হয়। মোট ভোটার ছিলেন ৯৩৬ জন। ভোট দেন ৮৫৬ জন। গণনার পরে দেখা যায় অন্য কয়েকবারের মতো এবারও সিটু প্রভাবিত প্রার্থীদের জয়ের আধিপত্য বজায় রয়েছে। কোনও আসন পায়নি তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। বদলে তিনটি আসনে জিতেছে বিএমএস। অধিকাংশ আসনেই সিটুর প্রার্থীর সঙ্গে বিএমএস প্রার্থীদের লড়াই হয়েছে। বিএমএসের জয়ী সদস্যদের একজন অসীম সাহা বলেন, ‘‘আমরা কর্মী ও আধিকারিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এবারই প্রথম নির্বাচনে লড়াই করেছিলাম। কর্মী-আধিকারিকদের সমর্থন পেয়ে তিনটি আসনে জয়ী হয়েছি। ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল হবে বলে আশা করছি।’’

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের দাবি, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নানা বেআইনি কার্যকলাপ প্রকাশ্যে এসেছে। কর্মীদের নানা ভাবে বঞ্চনার প্রতিবাদেই এই রায়।’’ সিটু প্রভাবিত রাজ্য বিদ্যুৎ ওয়ার্কমেনস ইউনিয়ন বিভাগীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি মহাদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বাড়েনি। বেতন-কমিশন কার্যকর হয়নি। এই নিয়ে তাপবিদ্যুৎ কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে রাজ্য সরকারের উপর। নির্বাচনে কর্মীদের সেই মনোভাবের প্রভাব পড়েছে।’’

গতবারের নির্বাচনে জয়ী তৃণমূল সদস্য সুব্রতকুমার দরিপা এবার হেরে গিয়েছেন। তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কোলাঘাট ইউনিটের সম্পাদক সুব্রত বলেন, ‘‘কর্মীদের মহার্ঘভাতা সহ বিভিন্ন দাবি পূরণ না হওয়া এবং কেটিপিপি-র মেলা আয়োজনে রিক্রিয়েশন ক্লাবকে বাদ দিয়ে বাইরের সংগঠনকে যুক্ত করা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে এই ভোটে। তাই এবার আমরা ভাল ফল করতে পারিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement