আগুয়ান: গড়বেতায় বাম গণসংগঠনের জাঠা। নিজস্ব চিত্র
একসময়ের গড়ে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও মিছিল করার ‘ঝুঁকি’ নেয়নি বামেরা। পরিবর্তনের ঝড়়ে বছর ছয়েক আগেই গড়বেতায় ধস নেমেছে দলের সংগঠনেও। এ বার বিপিএমও-র জাঠার হাত ধরে সেই গড়বেতাতেই ফিরল সিপিএম। জাঠার নেতৃত্বে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। জাঠা থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান সূর্যকান্তবাবু।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া হয়ে বামেদের কেন্দ্রীয় জাঠা বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে পৌঁছয়। কেন্দ্রীয় জাঠাকে গড়বেতার খড়িকাশুলিতে বরণ করে নেন কর্মী-সমর্থকেরা। এরপর জাঠা এগোতে থাকে গড়বেতা সদরের দিকে। জাঠা দেখতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ। সূর্যবাবুদের উপর পুষ্পবৃষ্টিও হয়েছে। সূর্যবাবু ছাড়াও জাঠায় ছিলেন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা। দেখা গিয়েছে একদা দাপুটে নেতা তপন ঘোষকেও।
গড়বেতায় সূর্যকান্তবাবু বলছিলেন, “আমাদের রাস্তায় নামার একটাই কারণ রাস্তা যদি খুঁজতে হয় তাহলে তা রাস্তায় নেমেই খুঁজতে হবে। খালি ভাষণ দিয়ে আর সমাবেশ করে হবে না। মানুষের কাছে যেতে হবে। দরকার হলে মাটিতে
কান রেখে মানুষের পদধ্বনি কি আওয়াজ দিচ্ছে সেটা আমাদের আয়ত্ত করতে হবে।”
সকালে গড়বেতার খড়িকাশুলিতে থেকে শুরু হওয়া জাঠা দুপুরে পৌঁছয় চন্দ্রকোনা রোডে। রোডে এসে একটু জিরিয়ে নেন কর্মী-সমর্থকেরা। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “এই জাঠা বিপিএমও-র। এটা কোনও দল নয়। গণসংগঠনগুলো এটা তৈরি করেছে। সব অংশের মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা মিলিত হয়েছি। এই জাঠা বুথে বুথে যাবে। প্রত্যেকটা বুথ ছুঁবে।” তাঁর কথায়, “খালি দাবির কথা বললে হবে না। দাবি আদায় করতে হবে। যার রেশন কার্ড নেই তার রেশন কার্ড আদায় করতে হবে। যদি একশো দিনের কাজ না পায়, তাহলে একশো দিনের কাজ আদায় করতে হবে।’’ রাজ্যের কর্মসংস্থানের সমস্যা নিয়েও সরব হন সূর্যবাবু। তিনি বলছিলেন, ‘‘এ রকম বেকার সমস্যা আমরা কখনও দেখিনি। মিথ্যা মামলা করে আমাদের কন্ঠস্বর আটকাতে চাইছে। তবে পারবে না।”
জাঠায় থাকা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহ বলছিলেন, “অনেক দিন পরে গড়বেতার মানুষ লাল ঝান্ডা দেখতে পেলেন। মানুষ দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বেরোতে চাইছেন। মানুষ ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।” যাত্রাপথের দু’ধারে যেমন লাল পতাকা ছিল, তেমনই তৃণমূলের পতাকাও ছিল। সিপিএম যেখানে পতাকা লাগিয়েছিল, ঠিক তার পাশেই তৃণমূল পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিল।
দীর্ঘদিন পরে ফের তাহলে গড়বেতায় ফিরল সিপিএম? এ দিনের জাঠা শেষে গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর মন্তব্য, “গড়বেতায় ওদের কিছু লোক ঘোরাঘুরি করেছে বলে শুনলাম! যাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে তারা কেউ এলাকার নয়!” সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এ দিনের জাঠা গড়বেতায় দলের সংগঠনে কিছুটা প্রাণ ফেরাবে বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।