প্রতীকী ছবি।
ব্রিগেডে বামেদের সভা তখন শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে বেরলো প্রাথমিক শিক্ষকদের সমবায় সমিতির ভোটের ফল। রবিবার বিনপুর-২ চক্রের প্রাথমিক শিক্ষকদের সমবায় সমিতির (বিনপুর-২ সার্কেল প্রাইমারি টিচার্স এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড) পরিচালন কমিটির নির্বাচনে সব আসনে জয়ী হলেন বাম সমর্থিত প্রার্থীরা। হারালেন শাসক দল সমর্থিত প্রার্থীদের।
সমবায় সমিতি নির্বাচনে সরাসরি রাজনৈতিক দল যুক্ত থাকে না। তবে ভোটে যে সংগঠনগুলি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের নেপথ্যে থাকে রাজনৈতিক দলের প্রভাব। সংশ্লিষ্ট সমিতির ৬টি আসনে ১২ জন প্রার্থী ছিলেন। ছ’জন ছিলেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ৬টি আসনে সিপিএমের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ সমর্থিত প্রার্থীরা ছিলেন। বাম সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ফল হয়েছে ৬-০। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিনপুর-২ চক্রের নেতা অপূর্ব মাহাতোও সমিতির একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গিয়েছেন।
এই ধরনের সমবায় সমিতি থেকে প্রাথমিক শিক্ষকরা দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও স্বপ্নমেয়াদি ঋণ পান। ১৯৯৪ সাল থেকে এই সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটিতে বাম সমর্থিত প্রার্থীরাই এক তরফা মনোনীত হয়ে এসেছেন। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরের বছর ২০১২ সালেও পরিচালন কমিটির ক্ষমতা বাম সমর্থিত প্রার্থীরাই দখল করেন। সেবারও ভোট হয়নি। সদস্যরা মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে ভোট না-করে এক প্রবীণ শিক্ষককে ‘প্রশাসক’ নিয়োগ করা হয়। প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এ বছর ৩১ জানুয়ারি শিক্ষক পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। বিনপুর-২ প্রাথমিক চক্রের মধ্যে রয়েছে বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা, ভেলাইডিহা, এড়গোদা, কাঁকো ও হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৫টি স্কুল। ওই স্কুলগুলির ২৫২ জন শিক্ষকের মধ্যে সমবায় সমিতির সদস্য আছেন ১৪৫ জন। এ দিন অবশ্য ভোট দিয়েছেন ১২১ জন।
গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে প্রচার করেছিলেন বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূল ও শিলদা অঞ্চল তৃণমূলের নেতারা। তার পরেও এই ফল কেন? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অপূর্ব বলেন, ‘‘কেন যে এমন হল বুঝতে পারছি না। মনে হয় আমরা গ্রহণযোগ্য মুখ হয়ে উঠতে পারিনি।’’ তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক সভাপতি চিন্ময় মাহাতো অবশ্য বলছেন, ‘‘ওখানে বছরের পর বছর বামপন্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনীত হতেন। এই প্রথম আমরাই ভোট করিয়েছি এবং প্রতিটি আসনে কিছু ভোট পেয়েছি। এটাই বড় সাফল্য।’’ চিন্ময়ের দাবি, ‘‘এলাকার প্রাথমিক স্কুল গুলির অধিকাংশ শিক্ষক বাইরে থেকে আসেন। তাঁরাই ভোটার। তাঁরা এলাকায় থাকলে তাঁদের অনুপ্রাণিত করে সমর্থন আদায় করতে পারতাম।’’ এবিপিটিএ-এর ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক বিপদভঞ্জন দুলে বলেন, ‘‘রাজ্যের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মানুষ বুঝতে পারছেন বামপন্থীদের কোনও বিকল্প নেই। তাই আমরা সব ক’টি আসনে জয়ী হয়েছি। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।’’