প্রচারে ব্যস্ত শেখ হানিফ।
জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৭০ সালে। এমনকী ২০১০ সালে পরিবর্তনের প্রবল ঝড়েও অটুট ছিল ‘বাম দুর্গ’ খড়্গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড। তবে এ বার লড়াই যে সহজ নয় তা বিলক্ষণ জানেন পুরভোটে বাম মনোনীত সিপিআই প্রার্থী শেখ হানিফ। গত বারের ফলের নিরিখে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ ইমতিয়াজ। আর অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে বাম দুর্গ ভাঙতে মরিয়া তৃণমূল প্রার্থী শেখ সাজ্জাদ।
খড়্গপুর পুরসভার একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত পাঁচবেড়িয়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডেই সিপিআইয়ের মতো কোনও রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলর রয়েছে একটানা পঁয়তাল্লিশ বছর। ১২ নম্বর ওয়ার্ড দীর্ঘ ৩৫ বছর রয়েছে সিপিএমের দখলে। আর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে ২৫ বছর। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই প্রার্থী হিসেবে মেহবুব আলি খান প্রথম জিতেছিলেন। তিনি ২৫ বছর নিজের দখলে রেখেছিলেন এই ওয়ার্ড। এরপর ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন নূরসেবা খাতুন, তার পরের ৫ বছর শেখ হানিফ, শেষ পাঁচ বছরে ছিলেন হানিফের স্ত্রী মুমতাজ কুদ্দুসি। এ বার জয়ের ধারা বজায় রাখতে ফের সিপিআইয়ের শেখ হানিফকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে বামেরা।
৪ নম্বর ওয়ার্ডে বামেদের ধারাবাহিক জয়ের কারণ কী?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সংখ্যালঘু রাজনীতিতে ভর করেই এখানে প্রথম জেতে বামেরা। এরপর রাজ্যের কংগ্রেস শাসন থেকে মানুষ বিমুখ হতে শুরু করায় টিকে গিয়েছিলেন বাম প্রার্থী। কিছুটা উন্নয়নের কাজেও মানুষের মন পেয়েছিল বামেরা। তবে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কোনও দিনই হয়নি। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, বাম জমানায় সন্ত্রাসের জন্যই এই ওয়ার্ডে ধারাবাহিক জয় এসেছিল বামেদের। ২০১০ সালের শেষ পুরসভা নির্বাচনেও জয়ী হন শেখ হানিফের স্ত্রী সিপিআই প্রার্থী মুমতাজ কুদ্দুসী। শেষ পাঁচ বছরে ওয়ার্ডের মানুষের পাশে হানিফকে দাঁড়াতে দেখা গেলেও তাঁর স্ত্রী মুমতাজকে ওয়ার্ডে ঘুরতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। যদিও এলাকায় কয়েকটি ঢালাই রাস্তা, কাঁচা রাস্তার মোরাম করা, পানীয় জলের বোরিং, বেকার ভাতার মতো কিছু কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন বিদায়ী কাউন্সিলর। সেই উন্নয়নকে সামনে রেখে মানুষ তাঁর দল ও তাঁকে জয়ী করবেন বলেই দাবি শেখ হানিফের।
এই ওয়ার্ডের মোট ভোটার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। গত বার সিপিআই প্রার্থী মুমতাজ পেয়েছিলেন ২৬১৭ ভোট। তাঁর থেকে ৫০৫ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সে বারের কংগ্রেস প্রার্থী নারগিস পারভিন। এ বার নারগিসের স্বামী শেখ সাজ্জাদ তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। আর কংগ্রেসের প্রার্থী মহম্মদ ইমতিয়াজ। কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়ন হয়নি। যে দু’টি বোরিং হয়েছে সেই জল পান করার অযোগ্য। মানুষ ওয়ার্ডে বদল চান। গতবার খুব কম ব্যবধানে আমরা হেরেছিলাম। এ বার বিপুল ভোটে জিতব।’’
যদিও তৃণমূলের দাবি তারাই জিতবে। তৃণমূল প্রার্থী শেখ সাজ্জাদের কথায়, ‘‘পুর-নির্বাচনে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নির্ভর করে। গত বছর আমার স্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। তখন বামেদের হাতে থাকা রেলের মালগুদামের শ্রমিক সংগঠন এখন তৃণমূলের হাতে এসেছে। আর এই এলাকাতে ওই চারশো শ্রমিক থাকেন। মানুষ আমাদেরই জেতাবেন।’’
কংগ্রেসকেই এখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন সিপিআই প্রার্থী। তবে নিজের জয় নিয়ে তিনি নিশ্চিত। শেখ হানিফের কথায়, ‘‘এটা ঠিক লড়াই কঠিন হবে। কারণ, কংগ্রেস প্রার্থী শক্তিশালী। কিন্তু এলাকার মানুষ বিগত পঁয়তাল্লিশ বছর উন্নয়নের ধারা দেখেই আমাদের জিতিয়েছেন। আমার স্ত্রী গত পাঁচ বছরে প্রচুর কাজ করেছে। তাই এ বারও আমরাই জিতছি।” কিন্তু মানুষ যে অনুন্নয়নের কথা বলছে? এ বার একটু চুপ করে সিপিআই প্রার্থীর জবাব, ‘‘এক সঙ্গে সব উন্নয়ন হয় না। তাছাড়া পুরসভায় তুলনায় উন্নত ওয়ার্ড যে বরাদ্দ পায় আমরাও তাই পাচ্ছি। তা সত্ত্বেও কাজ করেছি। আর না হওয়া কাজ ভবিষ্যতে করে ফেলব।’’