মুড়ি শিল্প থেকে নারী নির্যাতন। নির্বাচনী প্রচারে শাসকদলকে গানের সুরে বিঁধছে সিপিএম!
তৃণমূল সরকারের পাঁচ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে ইতিমধ্যেই একটি গানের সিডি প্রকাশিত হয়েছে। তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারমূলক বিজ্ঞাপনে শোনাও যাচ্ছে সেই গান। তৃণমূলের গানে যেমন উঠে এসেছে সুশাসনের দাবি, তেমনই সিপিএমের গানে শাসকদলের অপশাসনকে তুলে ধরা হয়েছে।
‘শিল্প শিল্প করে মরে, শিল্প তোদের ঘরে ঘরে, দেখতে পাস না চোখের ফেরে, শিল্প ঝুরি ঝুরি, আমার সাধের মুড়ি!’ – এমনই দশটি গান নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি সিডি। সিডির নাম, ‘আকাশটা লাল হচ্ছে আস্তে আস্তে...’। দলের নির্দেশ, প্রচার কর্মসূচির আগে- পরে এই সিডি চালাতে হবে। গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এই সিডি প্রকাশিত হয়েছে। এই সিডির প্রয়োগ ভাবনা যাঁর, সেই জয়ন্ত চক্রবর্তী বলছেন, “ইতিমধ্যে গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আমরা আজকের দিনের প্রধান প্রধান বিষয়গুলোই গানের সুরে বাঁধার চেষ্টা করেছি।” পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার সম্পাদক বিজয় পাল বলেন, “তৃণমূল সরকারের অপশাসনের দিকগুলোই গানে উঠে এসেছে।” তাঁর কথায়, “অনেকে দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সকলের মোহভঙ্গ হয়েছে। শ্রমিক- কৃষক থেকে বেকার যুবক- যুবতীরা এখন হতাশ। একটা নতুন শিল্পও আসেনি। সকলেই এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন।”
শুধু শিল্প নয়, গানে ফুটে উঠেছে নারী নির্যাতন থেকে আর্থিক তছরুপের অভিযোগের কথাও। একটি গানের কথায় রয়েছে, ‘কামদুনি থেকে পার্কস্ট্রিট, কাটোয়া থেকে কাকদ্বীপ, তোর মা কাঁদছে, তোর বোন কাঁদছে, আকাশে তাদের কান্না আর দীর্ঘশ্বাস, ও ছেলে তুই মুখ লুকিয়ে কোথায় যাস’। আবার ‘মানুষের টাকা তছরুপ করে যারা, কেড়ে নেয় প্রাণ কেড়ে নেয় রুজিরুটি, অনেক কষ্টে জমানো কিছু টাকা, সর্বস্বান্ত মানুষ- মা- মাটি।’ –এর মতো গানে রয়েছে সারদা কাণ্ডের ছায়া।
সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্য বলছেন, “যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু কী আর কাঠের শিল্প, সিমেন্টের শিল্প, লোহার শিল্পই শিল্প?’ যিনি দূর করে দেন, শিল্প- বাণিজ্য আর কলাশিল্পের ভেদাভেদ। সেই রাজ্যে শিল্প আসবে কী করে! আশা করি, ওই গানগুলো নির্বাচনী প্রচারে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।” নির্বাচনী প্রচারে গানে জোর দেওয়ার কারণ কী? সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্যের আর্থিক কর্মকাণ্ড সঙ্কুচিত হওয়ায় চাকরির সুযোগ কমেছে। রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা সমস্যার জেরে তৈরি হওয়া অস্থিরতায় লগ্নিকারীদের মনে নতুন আশঙ্কাও তৈরি করেছে। রাজ্যের বর্তমান সমস্যাগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরতেই গানের ভাবনা। মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। “এই ক্ষোভকে ইভিএমে নিয়ে যেতেই মুড়ি- শিল্প নিয়ে গান তৈরি করা হয়েছে”, বলছেন সিপিএমের জেলা কমিটির ওই সদস্য।
বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলে বলেন, ‘‘মানুষ এখন মোদীর পক্ষে আছেন। সারা দেশে মোদী হাওয়া। রাজ্যেও এখন মোদী হাওয়া চলছে। এই হাওয়াকে কোনও গানেই নষ্ট করা যাবে না!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও বক্তব্য, ‘‘কাজ নেই। তাই কুৎসা-অপপ্রচার করে গান করছে! ওই গানে কিছু আসে-যায় না! মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন।’’