শুক্রবার গ্রাম পরিদর্শনে জেলা পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র
‘সিল’ করে দেওয়া হল তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের দু’টি গ্রাম। ওই দুই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
শুক্রবার ওই দুই গ্রাম পরিদর্শনে যান জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল, মহকুমাশাসক, স্থানীয় বিডিও। তাঁরা গ্রামে ঢোকা এবং বার হওয়ার রাস্তাগুলি পরিদর্শন করেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন রাত থেকেই রাস্তাগুলি ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আজ, শনিবার থেকে গ্রামের কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। বাইরের কেউ ভিতরেও ঢুকতে পারবেন না। খুলবে না কোনও দোকানপাট।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন, ওই দুই গ্রামের প্রায় সাত হাজার বাসিন্দা গৃহবন্দি থাকবেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের ফোন নম্বর গ্রামবাসীদের দেওয়া হবে। কারও প্রয়োজন হলে ওই নম্বরে ফোন করবেন। প্রয়োজন মতো নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে গাড়ি যাবে গ্রামে। সেখান থেকে জিনিস কিনতে পারবেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে যেমন পুলিশের নজরদারি থাকবে, তেমনই ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ থেকেও চলবে নজরদারি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই গ্রাম দু’টি আপাতত সিল করে দেওয়া হচ্ছে।’’
বল্লুকের এক পান ব্যবসায়ী বৃদ্ধ ওই এলাকার প্রথম করোনা আক্রান্ত বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের আরও এক জনের শরীরে যেমন মিলেছে ভাইরাস, তেমনই এগরার এক করোনা আক্রান্ত মহিলা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পান ব্যবসায়ীর ভাইয়ের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে। তাতে দেখা গিয়েছে, তিনি করোনা পজ়িটিভ। ওই ব্যক্তি বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে, এগরার যে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসকের ছেলের বিয়ে বাড়ি ঘিরে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, সেই ব্যক্তির স্ত্রী সম্প্রতি সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। ওই বিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন কলকাতার এক করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ। এর পরেই চিকিৎসকের স্ত্রীয়েরও শরীরে করোনাভাইরাস মিলেছিল।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের পান ব্যবসায়ী বৃদ্ধের এক ভাই কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে কয়েকদিন আগে তমলুকের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। সেখানে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে কলকাতাতেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। করোনা উপসর্গ থাকায় ওই ব্যক্তির লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সেই করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘পান ব্যবসায়ীর পরিবারের আরও এক সদস্য করোনা আক্রান্ত বলে রিপোর্ট এসেছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বাসিন্দা ওই পান ব্যবসায়ী পরিবারের আরও ৬ সদস্যের নমুনার রিপোর্টে প্রথমে নেগেটিভ এসেছিল। তবে পরে তাঁদের কয়েকজনের অসুস্থ হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় ফের তাঁদের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, পান ব্যবসায়ীর ভাইকে যে গাড়িতে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়ির চালক, এক সহকারী-সহ তিনজনকে শুক্রবার চণ্ডীপুরের করোনা হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।