অকারণে বাইরে বেরনোর শাস্তি বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
করোনার সংক্রমণ রুখতে সারা দেশ জুড়ে লকটাউন চলছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের অতি-সক্রিয়তায় বিরক্ত সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, অকারণে সাধারণ মানুষকে মারধর করছে পুলিশ। আবার পুলিশের পাল্টা দাবি, অকারণে মানুষ বাইরে বেরোচ্ছেন লকডাউনকে অমান্য করে। ফলে করোনা সতর্কতায় ইতিমধ্যেই দুই তরফে কাজিয়া তুঙ্গে।
বৃহস্পতিবারও ঘাটাল, দাসপুর এবং চন্দ্রকোনায় বিক্ষিপ্তভাবে জটলার খবর সামনে এসেছে। তবে পুলিশ দেখলেই দৌড়ে পালাচ্ছেন সকলে। তবে পুলিশ গ্রাম ছাড়লেই ফের তৈরি হচ্ছে জটলা। কেউ কেউ মাচায় বসে জুড়ছেন খোশগল্প। কোথাও আবার চলছে মদের আসর। কোথাও চা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে তাস পেটাচ্ছেন কেউ কেউ। হাট-বাজার- মুদি দোকানে ভিড় তো আছেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ক’দিনে ভিন্ রাজ্য ও বিদেশ থেকে ঘাটালে ফিরেছেন অনেকে। তাঁদের প্রাথমিক পরীক্ষা তো হয়ইনি, এমনকী তাঁরা হোম কোয়রান্টিনও মানছেন না। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, “এত প্রচারেও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন জটলা রুখতে পুলিশের লাঠি চালানোটা জরুরি ছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর অভিযানে গিয়ে মারব কী মারব না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছি।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দাসপুরের জোতঘনশ্যাম, গোছাতি, গোমকপোতা, চাঁইপাট, সয়লা, নাড়াজোল এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে জমায়েত হয়েছিল। ঘাটাল ব্লকের সুলতানপুর, মহারাজপুর, কুঠিঘাট, ইড়পালা এবং চন্দ্রকোনার রামজীবনপুর, গোপালপুর এলাকাতেও একই ছবি। পুলিশের ওই সূত্রটি মনে করিয়ে দিয়েছে, গ্রাম-গঞ্জে যাঁরা জটলা তৈরি করছেন, তাঁদের সিংহভাগই ভিন্ রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরেছেন। ঘাটালের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “অভিযান আরও বাড়ানো হয়েছে। অযথা জমায়েত দেখলেই পুলিশের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
অন্য দিকে, নারায়ণগড়, বেলদা, দাঁতনের চিত্রটা একই। পুলিশের লাঠিচার্জ প্রসঙ্গে অনেকেই যেমন সহমত পোষণ করছেন, তেমনই অতি প্রয়োজনে বাজারে বেরনো মানুষের ওপর পড়ছে পুলিশের লাঠি। ফলে সমাজমাধ্যমে লাঠিচার্জের ভাল-মন্দ দু’দিকই উঠে আসছে। দাঁতনে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে জমায়েত, জটলা, পান এবং চায়ের দোকানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মাইকে প্রচারের পর কাজ না হলে, মারধর করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। অঙ্কিতা সাউ দাঁতন থানার পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়ে অহেতুক মারধরের অভিযোগ তুলেছেন। একই অভিযোগ বেলদা কলেজের এক ছাত্র সঞ্জয় দাসেরও। অঙ্কিতা সমাজমাধ্যমে লিখছেন, ‘নিজেদের একটু সংযত করুন। ভিড় যেন না হয় সেটা অবশ্যই দেখবেন, কিন্তু কোনও তথ্য না নিয়ে মোটরবাইক আরোহীদের মারধর সমর্থনযোগ্য নয়। মহিলাদেরও মারধর হচ্ছে কেন’? সঞ্জয় দাস আবার পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়ে লিখেছেন, পুলিশ আনাজ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পরিবহণ আটকাচ্ছে। কারণ ছাড়াই মারধর হচ্ছে’। যদিও লাঠিচার্জের বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য— লকডাউন এবং আইন অমান্য করছিলেন বহু মানুষ। সচেতন করার পরও না শুনলে কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
গড়বেতা ও গোয়ালতোড় থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অবশ্য এ দিন পুলিশি টহল থাকলেও মারধর বা লাঠিপেটার খবর পাওয়া যায়নি। লকডাউনের সময় পুলিশ অযথা যাতে বাড়াবাড়ি না করে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন সেই মতো টহলরত পুলিশকর্মীরা রাস্তায়, দোকান-বাজারে ভিড় দেখলেই মানুষকে সতর্ক করেছেন। পণ্যবাহী লরি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিয়েছেন। দোকান-বাজারে ভিড় এড়াতে দূরত্ব বজায় রেখে আগেই চুনের গন্ডি কেটে দিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। কোনও ক্রেতা সেই লক্ষ্মণরেখা টপকে গেলে সচেতনও করে দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা।