রবিবার সকালে শহরের ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা সংক্রমণের তালিকায় পূর্ব মেদিনীপুর ‘রেড জোন’-এর তালিকায়।
জেলারই কাঁথির বাসিন্দা এক যুবক শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনার সংক্রমণ আছে কি না তা জানার জন্য হাসপাতালের তরফে ওই যুবকের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। গত ১৬ এপ্রিস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ জানা যায়। এর পর ওই যুবককে আইসোলেশন থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ২৪ এপ্রিল কলকাতার আনার পথে ওই যুবক মারা যান।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সুব্রত কুমার রায় বলেন, ‘‘ওই যুবকের লালারসের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছিল।’’ আর সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে করোনা নিয়ে সচেতনতায়। কারণ কাঁথিতে এখনও পর্যন্ত কারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর না পাওয়া গেলেও লকডাউনের কার্যকারিতা যথাযথ বহল রাখার বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বরং কেন্দ্র সরকারের তরফে শনিবার মাঝরাতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড়ের ঘোষণার পর রবিবার সকাল থেকেই কাঁথি শহরের অসংখ্য দোকানপাট খুলে গিয়েছে। নিয়ম ভেঙে ভোর থেকে রাস্তাতেও নেমে পড়েন প্রচুর মানুষ। যে ভাবে সকাল থেকেই শহরজুড়ে টোটো এবং অটোর মতো পরিবহণ চালু হয়ে যায় তাতে লকডাউন কি না চা বোঝার উপায় ছিল না।
কাঁথির ক্যানালপাড় থেকে রাজাবাজার, সুপার মার্কেট থেকে বড় পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত বড় রাস্তার দিকে বহু দোকান ছিল খোলা। স্কুলবাজার চত্বর থেকে বাইপাস পর্যন্ত টোটো এবং অটোয় যাত্রী বহন চলেছে যথারীতি। মোটরবাইক নিয়েও বেরিয়ে পড়েন প্রচুর লোকজন। করোনা পরিস্থিতিতে জেলা ‘রেড জোন’ হওয়া সত্ত্বেও এবং লকডাউন চললেও রবিবার রাস্তায় রেকর্ড সংখ্যক লোকজন নেমেছিল বলে শহরবাসীর দাবি। যার পরিণতিতে দেখা গিয়েছে যানজটের ছবিও। অথচ লকডাউন প্রক্রিয়া কার্যকর করতে এ দিন সকাল এগারোটা পর্যন্ত রাস্তায় প্রশাসনের কোনও নজরদারি চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। রাজাবাজার এলাকার এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘‘দোকানের অর্ধেকটা খুলে বাজার থেকে কিছু জিনিস প্রয়োজন মতো কিনে এনেছি। এগারোটা নাগাদ পুলিশের গাড়ি এসে সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে যায়।’’ কিন্তু সকাল থেকে গোটা শহর যে ভাবে ভিড়ের পুরনো ছবি দেখল, সেখানে এত দেরিতে কেন পুলিশ কিংবা প্রশাসন অভিযান চালাল, তা নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ শহরের সচেতন নাগরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, যেখানে গোটা জেলাই ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত সেখানে নিয়মিত ভোর থেকে শহরের বহু দোকান খোলা রাখা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন নজরদারির দাবি করলেও কী ভাবে এটা হচ্ছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে কাঁথির মহকুমা শাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকারের নির্দেশিকা সম্পূর্ণ না পড়ে কিছু লোক এদিন শহরের রাস্তায় ভিড় করেছিল। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশিকা না আসায় পুরনো নির্দেশিকা বহাল রাখার জন্য স্থানীয় থানাকে নির্দেশ দিয়েছি।’’