হ্যামিল্টন হাইস্কুলে পরীক্ষার্থীরা। কোথাও নেই করোনা নিয়ে সতর্কতার পোস্টার। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এক জায়গায় বেশি লোকের জমায়েত এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেশি লোক জমায়েত হলে সে ক্ষেত্রে পরস্পর কমপক্ষে এক মিটারের বেশি দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু)।
অথচ এই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলার পরেও সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত থানা মিলিয়ে ২০০ জনের বেশি পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের নিয়ে এক বৈঠক ঘিরে প্রশ্ন উঠল। তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতায় সোমবার তমলুক শহরের শালগেছিয়ায় পুরসভার সুবর্ণজয়ন্তী সভাঘরে পুলিশের তরফে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে জেলার পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন থানার পুলিশ আধিকারিক, কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি মিলিয়ে ২০০ জনের বেশি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু করোনা সতর্কতা সংক্রান্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসা—কোনওটারই ব্যবস্থা বৈঠকে ছিল না বলে অভিযোগ।
বৈঠকে হাজির ছিলেন এমন কয়েকজন পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, সভাঘরে সারি দিয়ে থাকা চেয়ারে পাশাপাশি এক মিটারের মধ্যেই বসেছিলেন তাঁরা। যা নিয়ে পুলিশকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন করোনা নিয়ে সতর্কতা হিসেবে যেখানে বেশি লোকজন জমায়েত না হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের বৈঠক করার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বনের দরকার ছিল। বৈঠকে করোনা নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর বলতে পারবে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘পুরসভার সভাগৃহে পুলিশের বৈঠকের বিষয়টি জানতে পেরেছি। বৈঠকের ক্ষেত্রে করোনা নিয়ে কিছু সতর্কতা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈঠকে যোগ দেওয়া লোকজন একই এলাকার হওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
পুলিশের এই বৈঠক নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি করোনা নিয়ে সতর্কতায় অবহেলার ছবি ধরা পড়েছে জেলা প্রশাসনিক অফিস চত্বরেও। সোমবার জেলাপ্রশাসনিক অফিস চত্বরে কাজের প্রয়োজনে অনেক মানুষের ভিড় হলেও কোথাও করোনা নিয়ে সতর্কতার পোস্টার চোখে পড়েনি। একই ছবি তমলুকের বিভিন্ন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রেও।
করোনা নিয়ে কী ধরনের সতর্কতা নিতে হবে, তা নিয়ে ছবি-সহ পোস্টার লাগানোর জন্য রাজ্যের সব প্রাথমিক ও হাইস্কুলে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে শিক্ষা দফতর। স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জমায়েত এড়াতে সোমবার থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যথারীতি চলবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কয়েকশো ছাত্রছাত্রীর সিট পড়লেও শহরের হ্যামিল্টন হাইস্কুলে কোনও করোনা সতর্কতার পোস্টার দেখা যায়নি। স্কুলের প্রবেশপথে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ থাকার বিষয়ে পোষ্টার থাকলেও ছিল না করোনা নিয়ে সতর্কবার্তা। স্কুলের ভিতরেও এনিয়ে পোষ্টার দেখা যায়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। প্রধান শিক্ষক মধুসূদন জানা বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে সতর্কতায় আগের দিনেই আমরা ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলাম মাস্ক পরে আসার জন্য। স্কুলের তরফে একটি পোস্টারও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন দেখছি সেটা নেই। তবে স্বাস্থ্য দফতরের পোস্টার দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এবিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনিক অফিসে করোনা সতর্কতার পোস্টার দেওয়ার জন্য পোস্টার পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’