বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের এই জমিতেই স্টেডিয়াম হওয়ার কথা। নিজস্ব চিত্র।
শিল্পতালুকের জমিতেই স্টেডিয়াম গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল খড়্গপুরে। প্রাথমিক ভাবে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের একধারের জমি চিহ্নিতও হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা চায় না সেখানে স্টেডিয়াম হোক। বদলে শহরের কাছাকাছি কোনও এলাকায় স্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। জায়গার বদল চেয়ে প্রশাসনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিকল্প হিসেবে যে জমির কথা উঠে আসছে তাও বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকেরই জমি। এ বার অন্য ধারের জমিতে স্টেডিয়াম গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই জমি শহরের একেবারে কাছে,
ইন্দার পাশে।
এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কথা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘শহরের কাছে স্টেডিয়াম গড়ে তোলার কথা জানিয়েছি। প্রশাসনের কাছে বিকল্প প্রস্তাবও রেখেছি। শহরের আশপাশে স্টেডিয়াম হলে ছোট ছেলেমেয়েদের সুবিধে হবে।’’ পুরসভার এই প্রস্তাবের ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, “শহরের কাছে স্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাব পুরসভা দিয়েছে। তবে এটা জেলার ব্যাপার নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা নির্দেশ দেবেন তেমনই কাজ হবে।”
শিল্পের জমিতে স্টেডিয়াম করা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্টের খোঁচা, “রাজ্য সরকারের শিল্পনীতি ও উদ্যোগহীনতা পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পহীনতার পথে নিয়ে চলেছে। এখানে তো শিল্পের জমিতে স্টেডিয়াম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য দাবি, “কে বলছেন নতুন কারখানা হচ্ছে না? নতুন চাকরি হচ্ছে না? রাজ্য আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছে। তাও উন্নয়ন, কর্মসংস্থান হচ্ছে। শিল্পে বাংলা এগোচ্ছে।’’
কিন্তু শিল্পতালুকের জমিতে স্টেডিয়াম কেন? প্রশাসনের এক সূত্রের বক্তব্য, স্টেডিয়াম গড়তে প্রায় ১২-১৫ একর জমি প্রয়োজন। এক লপ্তে এতটা ফাঁকা জায়গা অন্য কোথাও নেই। শহরের মধ্যে তো নেই, শহরের কাছাকাছি অন্য কোথাও এতটা খাস জমি নেই। ফলে, খড়্গপুরে স্টেডিয়াম করতে হলে শিল্পতালুকের জমিতেই করতে হবে!
চলতি বছরের গোড়ায় মেদিনীপুরে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খড়্গপুরে স্টেডিয়াম তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়ে ছিলেন, এ জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ১২ একর জমিতে গড়ে উঠবে এই স্টেডিয়াম। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের একধারের ১২ একর জমিতেই স্টেডিয়াম গড়ে ওঠার কথা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে জমি চিহ্নিত করে প্রকল্পের শিলান্যাসও হয়েছে।
খড়্গপুরে এই এলাকায় বাম আমলে শিল্পের জন্য প্রায় ১২৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম। কিন্তু এখনও প্রায় ৯৪০ একর জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে শিল্পের ছিটেফোঁটা নেই। যে জমিটি স্টেডিয়ামের জন্য প্রাথমিক ভাবে বাছা হয়েছে, সেটি
দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। এই এলাকা রেলশহর থেকে অনেকটা দূরে। পুরসভা চাইছে, স্টেডিয়াম হোক উত্তর-পশ্চিম দিকে। এখানেও প্রয়োজনীয় ১২ একর জমি রয়েছে।
এটা ঠিক খড়্গপুরে স্টেডিয়াম জরুরি। কারণ, এখানে স্টেডিয়াম বলতে রেলের সেরসা স্টেডিয়াম। তবে এখানে খেলার আয়োজন করতে প্রচুর খরচ। ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয় রেলকে। বিএনআর মাঠ-সহ শহরের অনান্য মাঠগুলোর হালও খুব ভাল নয়। ছোট মাঠগুলোয় তো রাতে মদ-জুয়ার আসর বসে। ফলে, একটা নতুন স্টেডিয়াম হলে ভালই হয়।
কিন্তু শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে কেন স্টেডিয়াম হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।