Cyclone Yaas

ঝড় রুখতে প্রকৃতি বাঁচানোই পথ

রসুলপুর নদী তীরবর্তী এলাকায় কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে প্রচুর ম্যানগ্রোভ গাছ দেখা যেত। ইদানীং তার অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৬:০৭
Share:

রসুলপুর নদীর তীরে এই বাঁধ পরিদর্শন করেন বিশেষজ্ঞ দল। নিজস্ব চিত্র

আমপান, বুলবুল, ফণী এবং তারপরে এবছর ইয়াস—একটার পর একটা ঘূর্ণিঝড়ে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকার। তাই শুধু কংক্রিটই সমাধান নয়। প্রাকৃতিকভাবেই প্রকৃতির এই রোষের মোকাবিলা করতে হবে। ইয়াস বিধ্বস্ত পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা পরিদর্শনের পর এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

শুক্রবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর কলকাতা শাখার বিজ্ঞানী পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ীর নেতৃত্বে জীব বৈচিত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির এক প্রতিনিধিদল উপকূল এলাকা পরিদর্শন করে। উপকূল বাঁচানোর জন্য কী কী করা উচিত সে ব্যাপারে তারা তাদের পরামর্শ রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পাঠাবে। প্রতিনিধি দলটি প্রথমে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের রসুলপুর নদীকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে। পরে কাঁথি-১ ব্লকের সমুদ্রতীরবর্তী শৌলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে দেখে।

প্রসঙ্গত, রসুলপুর নদী তীরবর্তী এলাকায় কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে প্রচুর ম্যানগ্রোভ গাছ দেখা যেত। ইদানীং তার অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত। প্রতিনিধি দলের নজরেও তা এসেছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। একইসঙ্গে মন্দারমণি এবং দিঘায় যে ভাবে গত কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র কংক্রিটের নির্মাণ গড়ে উঠেছে তাতে বার বার ‘কোস্টাল রেগুলেশন জোন আইন’ (সিআরজেড) লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ দিন বিশেষজ্ঞরা তা নিয়েও আলোচনা করেন। গোটা উপকূল এলাকায কংক্রিটে ভরে যাওয়ায় সমুদ্র সরাসরি এসে সেখানে ধাক্কা মারে। এর ফলে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস গত কয়েক বছরে বেড়ে গিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। তার ফলে উপকূল এলাকায় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, চাষের জমি, সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে।

Advertisement

এব্যাপারে পুণ্যশ্লোকবাবু বলেন, ‘‘উপকূল এলাকায় নির্মাণে সিআরজেড আইন সঠিকভাবে মানা হয়নি। তাই সেখানকার মানুষকে এমন ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ প্রত্যেক বছর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষাকবচ কী হতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানী বলেন, ‘‘বালিয়াড়ি আর ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ বাড়াতে হবে উপকূল এলাকায়। তবেই প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব।’’ এই বিষয়ে এদিনই একটি সুপারিশ নবান্নে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। একইসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল বাঁচাতে কী কী করণীয়, তার একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক, গ্রিন ট্রাইবুনাল এবং নীতি আয়োগের কাছেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

জীব বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপন সমিতির সম্পাদক প্রীতি রঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় এবং উপকূল এলাকায় সব রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আটকানোর জন্য কী করণীয় সে ব্যাপারে আমাদের সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার জন্য এদিন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।’’ এ দিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ইন্দা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডক্টর সচিদানন্দ ভট্টাচার্য, এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর সুদীপ্ত কুমার ঘোড়ই প্রমুখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement