পুরভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই শাসক ও বিরোধী দলের চাপান উতোর বাড়ছে তমলুক শহরে।
শনিবার রাতে তমলুক পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীকে হেনস্থা ও তাঁর কাকাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে আবাসবাড়ি উত্তরপল্লি ক্লাবের কাছে শুক্রবার রাতে এক তৃণমূল কর্মীকে ধাক্কাধাক্কির অভিযোগ উঠল এক বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে তমলুক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভীম দাস নামে ওই তৃণমূল কর্মী। তার ভিত্তিতে তমলুক থানার পুলিশ তদন্ত করতে অভিযুক্ত বিজেপি কর্মী অনুকূল মিশ্রের বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ করে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি নেতাদের মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়েছে।
বিজেপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাসের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের দলীয় প্রার্থীকে হেনস্থা ও তাঁর কাকাকে মারধর করার ঘটনায় জড়িত দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। অথচ পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে এক তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে আমাদের দলের এক কর্মীর সামান্য বচসার ঘটনার পরে তৃণমূলের অভিযোগ পেয়ে আমাদের কর্মীর বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।’’
তমলুক শহর তৃণমূল সভাপতি দিব্যেন্দু রায় অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীরা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছিল । এ নিয়ে আমাদের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি । পুলিশ ওই এলাকায় টহল দিতে গিয়েছিল । বিজেপি কর্মীর বাড়ি পুলিশের তল্লাশি করতে যাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তমলুক থানার পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, দু’টি ঘটনারই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের জন্যই পুলিশ ওই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়েছিল।
অন্যদিকে পুরসভার ভোট প্রক্রিয়ার মাঝেই তমলুক শহরের প্রধান রাস্তায় অত্যাধুনিক আলো বসানোর কাজের জন্য রাস্তার ফুটপাথ খোঁড়ার কাজ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিজেপি। সোমবার সকালে তমলুক শহরের বাদামতলা এলাকায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি স্কুলের কাছে রাস্তার ধারে ফুটপাথ খোঁড়ার কাজ চলার সময় শ্রমিকদের বাধা দিতে যান কয়েকজন বিজেপি কর্মী। এ নিয়ে প্রথমে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বিরোধের জেরে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা।
পরে দু’দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাঝে শহরের ভিতরে প্রধান রাস্তার দু’ধারে নতুন করে আলোকস্তম্ভ বসানোর কাজ করা হচ্ছে। শহরের রাস্তায় কিছু এলাকায় মাটির তলা দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে বিদ্যুতের তার পাতার কাজ হলেও পুরসভার বড়বাজার থেকে বাদামতলা এলাকায় রাস্তার একপাশের ফুটপাথের উপর অংশ খুড়ে বিদ্যুতের তার পাতার কাজ করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা সুকুমার দাসের অভিযোগ, এটা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের সামিল। তা ছাড়া ওই আলোকস্তম্ভের সঙ্গে বিদ্যুতের তার পাতার জন্য নিয়ম অনুযায়ী যতটা মাটি খুঁড়ে গভীর দিয়ে যাওয়ার কথা সেইমত কাজ করা হচ্ছে না। তাই এ নিয়ে আমাদের কর্মীরা আপত্তি জানিয়েছিলেন।’’
তমলুকের বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি অবশ্য বিজেপি-র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘শহরের প্রধান রাস্তায় অত্যাধুনিক আলোর ব্যবস্থা করতে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ কাজ করছে। পুরসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই এই কাজ চলছে। কোনও অনিয়ম হয়নি।’’ তাঁর দাবি ওই কাজে আপত্তি জানানো নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা মিটে গিয়েছে।