আপ্রাণ: ঝুমি নদীর জলে ভেসে যাচ্ছে দোকান। জিনিসপত্র বাঁচানোর চেষ্টা ঘাটালের মনসুকায়। নিজস্ব চিত্র।
জল বাড়ছে। ভাঙছে বাড়ি। কোথাও নেই পানীয় জল। কোথাও বিদ্যুৎ। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খাওযার যোগাড়। নিম্নচাপের বৃষ্টি এবং জলাধারগুলির ছাড়া জলে ঘাটাল-সহ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হল।ঘাটাল শহর তো বটেই, ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন জলমগ্ন।
শিলাবতীর বাঁধ টপকে চন্দ্রকোনা ১ এবং ২ ব্লকের একাধিক গ্রাম প্লাবিত। দাসপুর ১ ব্লকের নাড়াজোল, রাজনগরেও পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। শুক্রবারও জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়া হয়েছে। ঘাটালে শিলাবতীর জল চরম বিপদসীমার উপরে বইছে। সার্বিক ভাবে ঘাটালে জল আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
ঘাটাল পুরসভার ১২টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। শহরে নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘাটাল শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঘাটাল ব্লকের আজবনগর, দেওয়ানচক, মনসুকা, মোহনপুর, বীরসিংহ, সুলতানপুর, ইড়পালা-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রাম পুরোপুরি জলমগ্ন। অসুস্থদের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ দিন ঘাটালের দীর্ঘগ্রামে মাস সাতেকের এক শিশুর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। খবর পেয়ে প্রশাসনের তরফে শিশুটিকে উদ্ধার করে বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মনসুকায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলা আটকে যান। স্থানীয় প্রশাসন মহিলাকে উদ্ধার করে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নদীর জল গ্রামে ঢুকে পড়ায় চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের চল্লিশ-পঞ্চাশটি গ্রাম পুরোপুরি জলের তলায় চলে যায়। দাসপুর-১ ব্লকের নাড়াজোল, রাজনগরের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। নাড়াজোলে মূল সড়কে জল উঠে গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ঘাটাল সহ বিভিন্ন এলাকায় ১৫৭টি ত্রাণ শিবির খোলা রয়েছে। শিবিরে ৭,৭৮২ জন রয়েছেন। উদ্ধারে এবং ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে ৯২টি বোট ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে অনেক মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ এই মুহূর্তে সবংয়ে ২৪টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ২,৩৪৫ জন, পিংলায় ৭৯টি শিবিরে রয়েছেন ৩,২৮৮ জন, ডেবরায় ২৯টি শিবিরে রয়েছেন ১,৩৫২ জন, ঘাটালে ৬টি শিবিরে রয়েছেন ৫৫ জন, দাসপুর- ১ এ ৩টি শিবিরে রয়েছেন ১১৫ জন, চন্দ্রকোনা- ১ এ ৫টি শিবিরে রয়েছেন ৩২২ জন, চন্দ্রকোনা- ২ এ ৩টি শিবিরে রয়েছেন ৭২ জন, ঘাটাল শহরে ২টি শিবিরে রয়েছেন ২০ জন।
শিলাবতী এবং তারই শাখানদী কেঠিয়ার জলে প্লাবিত হয়েছে গড়বেতা ১ ব্লকের বড়মুড়া অঞ্চলের ৫ টি গ্রাম আর সন্ধিপুর অঞ্চলের ৪ টি গ্রাম। এ ছাড়া দুটি অঞ্চলের ৩৫ টিরও বেশি মৌজার কৃষিজমি জলের তলায়। বহু রাস্তা জলমগ্ন। বড়মুড়া অঞ্চলে একটি নৌকা থাকলেও সন্ধিপুর অঞ্চলে তাও নেই। দেওয়ান, কালিন্দীপুর, লাউমারা, রঘুনাথপুর, কালিকাপুর এলাকায় এ দিনও ছিল কোমর সমান জল। এ দিন প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বানভাসি এলাকা পরিদর্শন করেন বিধায়ক তথা জেলাপরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা।
জল বাড়ছে কংসাবতীরও। কেশপুরের এনায়েতপুর, সরিষাখোলার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির যত অবনতি হচ্ছে, দুর্গতদের মধ্যে ততই বাড়ছে ক্ষোভ- বিক্ষোভ। ত্রাণের দাবি জোরদার হচ্ছে।