সরেজমিন: মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল ক’দিন আগেই।
তার পর শোনা যায় আরও নানা অভিযোগ। কেউ বলছেন, রাতে ওয়ার্ডে থাকেন না নার্সরা। কারও বক্তব্য, চিকিৎসকরা নিয়মিত আসেন না। রয়েছে রেফার করে দেওয়ার অভিযোগও। আর বেআইনি পার্কিং, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের দৌরাত্ম্য, ওয়ার্ডের ভিতর কুকুর-বিড়াল ঘুরে বেড়ানোর মতো অভিযোগ তো শোনা যায় হামেশাই।
লাগাতার এমনই সব অভিযোগে জর্জরিত কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন মহকুমা রোগী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিরা। সোমবার রাতে কাঁথির মহকুমাশাসক কথা রোগী কল্যাণ সমিতির এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান শুভময় ভট্টাচার্য এবং কাঁথি থানার আইসি-কে নিয়ে রাতের হাসপাতাল ঘুরে দেখেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। তাঁদের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরিয়ে দেখান হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী। পরিদর্শনের পর বেশ কিছু বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দিব্যেন্দুবাবু ও শুভময়বাবু।
এ দিন প্রথমে ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ হয় ফিমেল ওয়ার্ডে। এখানে চিকিৎসকরা নিজেরাই রোগীর ফাইল বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন দিব্যেন্দুবাবু। এর পর মেল ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁরা জানেন, এই বিভাগের রোগীদের রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। এত আগে কেন খাবার দেওয়া হল, সে ব্যাপারে খোঁজ নেন আধিকারিকেরা। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ বিষয়েও হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে কথা বলে সমিতি। নার্সদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা না পাওয়ার কারণ নিয়ে জানতে চায় তারা। সব্যসাচীবাবু জানান, এ কারণে শো-কজ করা হয়েছে দু’জন নার্সকে। আর শনিবার রাতে চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে তদন্ত কমিটি গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপারের কথায়, “এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে, হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজ। সেই কাজ পরিদর্শন ও রাতে হাসপাতাল চত্বরের হাল এ দিন খতিয়ে দেখে সমিতি। বিশেষত, হাসপাতাল এলাকায় যেখানে সেখানে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স এবং টোটো, বাইক পার্কিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সমিতি। এ দিন স্থানীয় ও রোগীদের পরিজনেরা দাবি তোলেন, জরুরি বিভাগের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক সমিতি।
হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় বেশ কয়েকটি বিড়াল চোখে পড়ে পরিদর্শক দলের। মহকুমাশাসক বলেন, “১৫ দিন অন্তর বিড়ালের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাদের দূরে ছেড়ে দিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়। তবে বর্তমানে এক মাস অন্তর হচ্ছে সেই অভিযান। এটা ১৫ দিন অন্তর করতেই হবে।”
হাসপাতালের বহু চিকিৎসকই সন্ধে ৬টায় ওয়ার্ডে ভিজিট করেন। পরের ভিজিট করেন পর দিন সকাল ৯টায়। দু’টি ভিজিটের মাঝে সময়ের ফারাক থাকে অনেকটাই। অভিযোগ, এর ফলে রোগীদের যথাযথ তদারক করা হয় না। পরিজনদের দাবি, হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকই একাধিক বেসরকারি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। সে জন্যেই তাঁরা হাসাপাতালে অনিয়মিত বলে অভিযোগ।
এ ছাড়াও, হাসপাতালের বেশ কয়েকটি সিসি টিভি এখন খারাপ। তাই রোগীদের নিরাপত্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিদর্শকেরা। আইসোলেশন ওয়ার্ড, ডোমের সংখ্যা নিয়েও খোঁজ নেন সমিতির কর্তারা। এ দিন মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কে যায় প্রতিনিধি দল। রক্ত দেওয়া, সংগ্রহ ও মজুত রক্তের বিষয়ে খোঁজ নেন তারা। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “হাসপাতালের এত অভিযোগ বরদাস্ত করবে না সমিতি। প্রয়োজনে এ বার থেকে ঘনঘন ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করা হবে।”
এ দিনের পরিদর্শনে অবশ্য খুশি স্থানীয় মানুষ ও রোগীর পরিজনেরা।