প্রতীকী ছবি।
বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গ্রামে সালিশি সভা ডেকে এক বিজেপি কর্মীকে জরিমানা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। পরে রেল লাইনে ওই বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ট্রেনে কাটা পড়ে তিনি মারা যান বলে রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁশকুড়া বিডিও অফিসের কাছে রেললাইনের ধারে ভোলানাথ রাউত (৩৫) নামে ওই বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে রেলপুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়। রবিবার তাঁর পরিবারের লোকেরা মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
পাঁশকুড়া থানার মহৎপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী ভোলানাথের মৃতদেহ শনাক্ত করার পর তাঁর বাবা গ্রামের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুর পর গ্রামে তাঁর স্মরণসভার আয়োজন করেছিলেন ভোলানাথ। এই নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলাও হয় অভিযোগ। গত ২৬ অগস্ট এলাকার তৃণমূল নেতা গুরুপদ মুন্সি-সহ গ্রামের কিছু তৃণমূল কর্মী ভোলানাথের সঙ্গে প্রতিবেশী স্বামীবিচ্ছিন্না এক মহিলার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গ্রামে সালিশি সভা ডাকে। সেখানে ভোলানাথকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু ভোলানাথ রাজি না হওয়ায় বাদানুবাদ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত জরিমানা হিসাবে ১১ হাজার টাকা ধার্য করা হয়।
ভোলানাথের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার, ৩০ অগস্ট দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ভোলানাথ। রাতে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। শনিবার পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন বৃহস্পতিবার বিকেলে তমলুক রেলপুলের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় ভোলানাথ। এরপর রেলপুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিবারের লোকেরা। দেহ শনাক্তকরণের পর ওই রাতে ভোলানাথের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছলে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ভোলানাথের বাবা সুধীর রাউতের অভিযোগ, ‘‘ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তৃণমূলের ব্লক যুব নেতা গুরুপদ মুন্সি-সহ তৃণমূলের লোকজন গ্রামে সালিশি ডেকে জরিমানা করেছিল। সালিশি সভায় অপমানের জেরেই তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেছে।’’ প্রতিবেশী যে মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তোলা হয়েছিল সেই মহিলার বাবা বলেন, ‘‘সালিশিসভায় আমি ভোলানাথের সঙ্গে আমার মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বার বার জানিয়েছি। তা সত্ত্বেও ভোলানাথকে দোষীসাব্যস্ত করে জরিমানা করা হয়।’’
যদিও গুরুপদবাবুর দাবি, ‘‘ভোলানাথের বাবা আমাদের কাছে ছেলের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তা নিয়ে গ্রামে সালিশি ডেকে ভোলানাথকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। জরিমানা করার অভিযোগ মিথ্যা। ওঁর মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
প্রসঙ্গত গুরুপদবাবুর স্ত্রী সুনীতা মুন্সি এবার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান ও তৃণমূল নেতা নন্দকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পেরেছি। এর সঙ্গে সালিশি সভার সম্পর্ক নেই। তবে অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’
তমলুকের সি আই বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ট্রেনের ধাক্কায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে গ্রামে মৃতদেহ নিয়ে গেলে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে যায়। গ্রামবাসীদের কাছে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে গ্রামে কিছু লোক সালিশি ডেকেছিল। তারপর এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যদিও মৃতের পরিবারের তরফে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।’’