মেডিক্যালে মৃত কিশোরীর দেহের ময়নাতদন্তের পরে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
চিকিৎসায় অবহেলা। মেদিনীপুর মেডিক্যালের পুরনো ‘রোগ’ বলেই অনুযোগ একাংশ রোগীর পরিজনের। যে ‘রোগ’ এখনও সারেনি! রবিবার রাতে এই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর তেরোর সুপ্রিয়া রায়ের। তার পেট ব্যথা হচ্ছিল। পরিজনেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। শুক্রবার ভর্তি হয়েছিল মেয়েটি। এরপর অপারেশন হয়। রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, ভুল অপারেশনেই মৃত্যু হয়েছে।
তদন্তের দাবি জানিয়েছে মেয়েটির পরিবার। একই দাবি জানিয়েছে শাসক-বিরোধী, যুযুধানপক্ষই। মেয়েটির চিকিৎসা ঠিকঠাক হচ্ছে না, পরিবারের কাছ থেকে এ কথা শুনেই হাসপাতালে পৌঁছেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায়, পুরপ্রধান সৌমেন খান প্রমুখ। সুজয় বলছিলেন, ‘‘চিকিৎসায় ভুলত্রুটি থেকে থাকতে পারে। তদন্ত হোক।’’ দীনেন বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। যথাযথ তদন্ত চাইছি।’’ বিধায়ক শোনাচ্ছেন, ‘‘আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত চেয়েছিলাম। এই প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফি চেয়েছিলাম। তদন্ত কমিটি গঠন চেয়েছিলাম। এ সবই হয়েছে।’’
মেয়েটির মৃত্যুর জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, ‘‘ভুল অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে। এখন সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ কিশোরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রবিবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এই বিজেপি নেতা। শঙ্কর বলেন, ‘‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি মমতা-পুলিশ চলে এসেছে। তৃণমূলের নেতারা চলে এসেছে। এরা কেন এসেছে, কী প্রয়োজন! আসলে ওরা সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে!’’ হাসপাতালের পরিষেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয়ও। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, ‘‘এখানে দেখছি, রোগী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটি অবহেলিতই থেকে গিয়েছে। ডাক্তার, নার্সদের একাংশ রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে ঠিকঠাক কথাই বলেন না।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউতের আশ্বাস, ‘‘যথাযথ তদন্তই হবে।’’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রয়েছেন।
মেডিক্যালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নতুন নয়। মাঝেমধ্যেই ওঠে। অভিযোগ ‘চড়া’ মাত্রায় পৌঁছলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সাম্প্রতিক অতীতেও একাধিক ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে কোনও চিকিৎসক-নার্সের ‘শাস্তি’ হয়েছে? সোমবার হাসপাতালের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বলে মনে পড়ছে! তদন্তের শেষে কী হয়েছে শেষমেশ, সেটা এখনই মনে পড়ছে না!’’ অনুযোগ, তদন্ত- রিপোর্ট ফাইলবন্দি হয়েই পড়ে থাকে!
দু’দিনে দু’বার অপারেশন হয়েছিল ওই কিশোরীর। ভুল হয়ে থাকলে সেটা কোথায় হয়েছিল? অপারেশনের সময়, না কি অপারেশন পরবর্তী দেখভালে? সদুত্তর এড়িয়ে হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও অপারেশনের পরে অনেক সময়ই একাধিক জটিলতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, সেটা তদন্ত কমিটি দেখবে।’’
একাংশ ওয়ার্ডের অবস্থা বেহাল। সেখানে এখন মেডিক্যালে নতুন তোরণ তৈরির কাজ চলছে। তিনদিকে তিনটি তোরণ তৈরি হওয়ার কথা। সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে! পুরনো ‘রোগ’ নিয়েই রূপটানে ব্যস্ত হাসপাতাল!