অস্বাস্থ্যকর: ঝাড়গ্রামের রাস্তার পাশের শালবনে এভাবেই পড়ে থাকছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র
বিধি ভেঙে ঝাড়গ্রাম শহরের আবর্জনা ফেলার জায়গায় বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরসভার নিশানায় রয়েছে শহরের একাংশ বেসরকারি নার্সিংহোম ও প্যাথোলজিক্যাল সেন্টার। ফলে অরণ্যশহরে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে বলে দাবি পুরসভার। এ জন্য চলতি অর্থ বছরে পুরসভা অরণ্যশহরের নার্সিংহোম ও নির্ণয় কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতি বছর এপ্রিলে নার্সিংহোম ও নির্ণয় কেন্দ্রগুলির এক বছরের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) দেয় পুরসভা। এ বছর পুরসভার পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ এবং এনওসি দেওয়ার বিষয়টি সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। এক পুরকর্তা জানান, বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য সমস্যা নিয়ে স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে হেস্তনেস্ত করতে চায় পুরসভা।
অরণ্যশহরে ৬টি নার্সিংহোম এবং ২৬টি নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি এজেন্সি। নার্সিংহোম ও নির্ণয় কেন্দ্রগুলিকে ওই সংস্থার সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করতে হয়। এ জন্য ওই এজেন্সিকে বার্ষিক মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করলে তবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র মেলে। বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করে পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটায় সংস্থার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে সেগুলি পদ্ধতি মাফিক নষ্ট করা হয়।
ঝাড়গ্রামের সরকারি জেলা ও মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে প্রতিদিন বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট সংগ্রহ করে নিয়ে যায় ওই সংস্থাটি। সপ্তাহে তিন দিন বেসরকারি নার্সিংহোম ও প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলির বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট সংগ্রহ করে ওই সংস্থাটি। অভিযোগ, শহরের কিছু নির্ণয় কেন্দ্র ও কয়েকটি নার্সিংহোম খরচ বাঁচাতে পুরসভার নোংরা ফেলার জায়গায় বাড়তি মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলে দিয়ে যায়। শহরের কিছু চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে ছোট অপারেশন, ইনজেকশন দেওয়া হয়। সেখানকার সিরিঞ্জ, রক্ত মাখা তুলো ফেলা হয় পুরসভার নোংরা ফেলার জায়গায়।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের আবর্জনা ফেলার জায়গা গুলিতে রাতের অন্ধকারে রাশি রাশি মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার এক সাফাই কর্মী বলেন, “আবর্জনা ফেলার জায়গায় সকালে গিয়ে দেখা যায় রাশি রাশি ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, রক্তমাখা তুলো, গর্ভপাতের বর্জ্য-সহ নানা ধরনের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য পড়ে থাকছে। কেউ কেউ আবার শহরের অদূরে জঙ্গলের মধ্যে মেডিক্যাল ওয়েস্ট ফেলে দিচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অরণ্যশহরে জঞ্জাল ফেলার জন্য ১২ টি প্রাইমারি পয়েন্ট রয়েছে। ওই ১২টির মধ্যে গোটা ছ’য়েক প্রাইমারি পয়েন্টে প্রায়ই মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে পুরবাসীর একাংশও দফায় দফায় পুরসভাকে অভিযোগ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানও শুরু
করেছে পুরসভা।
শহরের একটি নির্ণয় কেন্দ্রের মালিক দীপক আখুলি বলেন, “আমাদের নির্ণয় কেন্দ্রে কেবলমাত্র এক্স রে করা হয়। বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য হয় না। তা সত্ত্বেও পুরসভা আমাদের ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্নবীকরণও আটকে দিয়েছে।”
পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “যে সব নার্সিংহোম ও নির্ণয় কেন্দ্র নিয়ম ভেঙে পুরসভার ভ্যাটে মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলছে, প্রয়োজনে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।” ঝাড়গ্রাম জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি বলেন, “পুরসভার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও নির্ণয় কেন্দ্র গুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব। কোনও মতেই পুরসভার ভ্যাটে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা যাবে না।”