বন্দরে পণ্য খালাস নিয়ে জট কাটল হলদিয়ায়। স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (সেল)-এর আটকে পড়া দু’টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে রাজি হল ‘রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানি’। তবে তার জন্য সেল বন্দরের নির্দিষ্ট দরের থেকে কিছু বাড়তি টাকা দেবে।
মঙ্গলবার রাতে অবশ্য এই কাজই করতে রাজি ছিল না পণ্য খালাসকারী এই সংস্থাটি। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্য একটি সংস্থার থেকে পে-লোডার নিয়েছিল। কিন্তু শাসক দলের শ্রমিক ইউনিয়নের (আইএনটিটিইউসি) বাধায় ওই সংস্থা কাজ করতে পারেনি বলে অভিযোগ। ফলে, গত তিন দিন ধরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা সেলের কোকিং কোল বোঝাই দু’টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার দিনভরও দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে রফাসূত্র বের করতে পারেননি বন্দর কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত রাতে সেল-এর অনুরোধে রিপ্লে কাজে রাজি হওয়ায় জট কাটে।
‘রিপ্লে’-র অন্যতম কর্ণধার সৌমিক বসু বলেন, ‘‘বাড়তি কাজের জন্য বাড়তি টাকা যে দিতে হবে তা প্রথম থেকে আমরা বলে আসছি। বন্দর এবং সেল উভয়েই তা মেনে নেওয়ায় জট কেটেছে।’’ বন্দরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘বন্দর ব্যবহারকারীদের চাপের মুখেই রিপ্লে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। পণ্য খালাসের দর ও পে-লোডারের ভাড়া বাবদ যে টাকা সেলকে দিতে হবে তা আগের দরের চেয়ে অনেক সস্তা। ফলে আখেরে লাভ হবে সেলের মতো আমদানি-রফতানিকারী সংস্থাগুলিরই।’’ এই ব্যবস্থাই কি বরাবরের জন্য মেনে নেবে রিপ্লে? সৌমিকবাবু জানান, আপাতত দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজগুলি থেকে পণ্য খালাস করে দেওয়া হবে। স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে গোটা বিষয়টিতে ইউনিয়নের ভূমিকা নেই বলে দাবি তাঁর।
বৃহস্পতিবার দিনভর অবশ্য বন্দরে টানাপড়েন চলে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু করতে দু’দফায় আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল আদককে বৈঠকে ডাকেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি না আসায় বৈঠক হয়নি। সন্ধ্যায় বন্দরের ডেপুটি চেয়্যারম্যান মণীশ জৈনের উপস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠকে বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (মেরিন) এস এন চৌবে বলেন, ‘‘আমরা দু’-দু’বার ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আসেননি।’’ কেন গেলেন না বৈঠকে? শ্যামলবাবুর জবাব, ‘‘দুপুর পর্যন্ত হলদিয়ায় থাকাকালীন কোনও ই-মেল পাইনি। পরে শহরের বাইরে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ভবিষ্যতে শ্রমিক স্বার্থে বৈঠক হলে নিশ্চয়ই যাব।’’
এ দিন সন্ধ্যায় প্রেস বিবৃতি দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন দিন ধরে চলা অচলাবস্থার দায় শ্রমিক ইউনিয়নের উপরেই চাপান। কর্তৃপক্ষের দাবি, আমদানি-রফতানির খরচ কমাতে যে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা ভেস্তে দিতেই একটি স্বার্থ গোষ্ঠী এ সব করছে। হলদিয়া বন্দরের আধিপত্য এখন আইএনটিটিইউসি-র হাতে। ফলে, কর্তৃপক্ষ যে তাদের দিকেই আঙুল তুলেছেন তা স্পষ্ট। আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামলবাবু অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা পে-লোডার আটকাইনি। জাহাজ আটকে থাকার দায় কোনও ভাবেই আমাদের নয়।’’
হলদিয়া বন্দরে এতদিন লাইসেন্সপ্রাপ্ত পণ্য খালাসকারী সংস্থাগুলি কাজ করত। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট দর ছিল না। সংস্থাগুলির থেকে রাজস্ব পেত না বন্দর। তাই দরপত্র চেয়ে পণ্য খালাসকারী সংস্থা নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। বন্দর ঠিক করে দেয়, প্রতি টন পণ্য খালাসে ১১৯.৪৮ টাকা সর্বোচ্চ নিতে পারবে কোনও সংস্থা। এর মধ্যে যে সংস্থা বন্দরকে সর্বাধিক রাজস্ব দেবে তারাই বরাত পাবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতি টনে সর্বোচ্চ ১৪.৭৪ টাকা রাজস্ব বন্দরকে দিতে রাজি হয় রিপ্লে-সহ ৮টি সংস্থা। ১ এপ্রিল থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়।
এ দিকে, যে সংস্থার পে-লোডার নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, সেই ‘ফাইভ স্টার’-এর কর্মীরা এ দিন বন্দরের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, জাহাজ পরিষ্কার, ওয়াগন সাফাইয়ের মতো যে সব কাজ তাঁরা করেন, সম্প্রতি তার বরাত পাচ্ছে না তাঁদের সংস্থা। তাই তাঁরা কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। ওই সংস্থার মালিক শেখ মোজাফ্ফর জানান, ‘রিপ্লে’র মতো সংস্থার থেকেই তাঁরা কাজের বরাত পান। কিন্তু গত ১ এপ্রিল থেকে তা পাচ্ছেন না। ‘রিপ্লে’-এর তরফে জানানো হয়েছে, টেন্ডারে এই শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই। ওই বিষয়টি যত দিন না স্থির হচ্ছে, তত দিন কাজের বরাত দেওয়া যাবে না।