মজুরি বৃদ্ধি-সহ বেশ কয়েক দফা দাবিতে আগামী শুক্রবার থেকে মেদিনীপুর শহরে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিল সাফাই মজদুর ইউনিয়ন। ইতিমধ্যে পুর-কর্তৃপক্ষকে তারা এই সংক্রান্ত নোটিসও ধরিয়েছে। সাফাই মজদুর ইউনিয়নের নেতা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাফাই শ্রমিকদের সঙ্গে পুর-কর্তৃপক্ষ অন্যায় আচরণ করছেন। শ্রমিকেরা অস্বাস্থ্যকর- দূষণযুক্ত পরিবেশে কাজ করেন। অথচ, দীর্ঘদিন তাঁদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। গত তিন মাসে আমরা পুর- কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও কাজ হয়নি।’’ তাঁর দাবি, পুরসভায় ব্যাপক দুর্নীতিও চলছে। বাধ্য হয়েই তাঁরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সাফাই কর্মীদের ধর্মঘটে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে শহরবাসী। যদিও এ বিষয়ে উপ- পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “শহরবাসীকে সমস্যায় ফেলে অন্যায় ভাবে ধর্মঘট হলে পুরসভা কড়া পদক্ষেপই করবে।”
কয়েক বছর আগেও মেদিনীপুরে সাফাই কর্মীরা লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সেই সময় যথেষ্ট দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছিল শহরের বাসিন্দাদের। শহরের বাসিন্দা চন্দ্রশেখর দাস, তনিমা সাউদের কথায়, “বছর কয়েক আগে সাফাই ধর্মঘট হয়েছিল। ধর্মঘটের ফলে শহরের এখানে- সেখানে আবর্জনার পাহাড় জমে গিয়েছিল। ধর্মঘট ওঠার বেশ কয়েক দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল।” এ বারও সাফাই কর্মীদের ধর্মঘট হলে একই দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
পুরসভার এক সূত্রে খবর, কাল, বৃহস্পতিবার পুর- পারিষদদের এক বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে সাফাই- ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মেদিনীপুর শহরের সর্বত্র নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না- বলেই অভিযোগ। শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর আশপাশে থাকা একাংশ ভ্যাট আবার দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা। মেরামতের উদ্যোগ নেই। শহরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় আবর্জনা জমে থাকার ফলে অনেক সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে লাগাতার ধর্মঘট হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
শহরের বাসিন্দা চন্দ্রশেখর দাস, তনিমা সাউদের কথায়, “বছর কয়েক আগে সাফাই ধর্মঘট হয়েছিল। ধর্মঘটের ফলে শহরের এখানে- সেখানে আবর্জনার পাহাড় জমে গিয়েছিল। ধর্মঘট ওঠার বেশ কয়েক দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল।” মেদিনীপুর শহরে এখন পুরোদমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্পের কাজও শুরু হয়নি। ফলে, আবর্জনার সমস্যা থেকে শহরকে মুক্ত করার পরিকল্পনা শিকেয়। চন্দ্রশেখরবাবু, তনিমাদেবীদের কথায়, “এখন দূষণ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। আবর্জনা থেকে দূষণ রোধ করার পাশাপাশি আবর্জনাকে পুনরায় কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনাও চলছে। অথচ, শহরে এই উদ্যোগ নেই।”
সাফাই মজদুর ইউনিয়নের বক্তব্য, মেদিনীপুর শহরকে বাসযোগ্য করে রাখার জন্য প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ ট্রাক্টর আবর্জনা সাফাই করেন পুরসভার প্রায় চারশো সাফাই কর্মী। শহরকে জঞ্জাল- মুক্ত করতে উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং আরও বেশি শ্রমিক নিয়োগ প্রয়োজন। অথচ, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। শ্রমিকদের কেউ মজুরি পান ১২০ টাকা, কেউ ১৭৪ টাকা, কেউ ১৯৫ টাকা।
ইউনিয়নের নেতা তপনবাবু বলেন, “অবিলম্বে শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের উপর শোষণ আমরা মানব না।’’ শ্রমিকদের শোষণ করার অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়ে পুরপ্রধান প্রণববাবু বলেন, “কিছু দাবি থাকতেই পারে। তবে এ ভাবে ধর্মঘট কেন? মনে রাখতে হবে, পুরসভারও একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।” তাঁর কথায়, “যাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাঁদের মনে হয়েছে, এ ভাবে দাবি পূরণ হতে পারে। তবে আমরা মনে করি, এটা পথ নয়। শহরবাসী সমস্যায় পড়বেন, এমন পথে গিয়ে আন্দোলন ঠিক নয়।” এ বিষয়ে উপ- পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ভ্যাট উপচে আবর্জনা রাস্তায় এসে পড়লে পথচলতি মানুষের সমস্যা হয়ই। শহরবাসী যাতে সমস্যায় না- পড়েন, সেই জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করা হবে।”